টাঙ্গাইলের সম্ভাবনাময় পণ্য মাল্টা

মাল্টা
আঙুর,আপেল কমলা আর মাল্টা এগুলোর নাম এলেই কেমন যেন ফরেন ফরেন একটা ভাব আসে না?আসলে এই ফরেন ফল গুলো ভালো হলেও আমাদের ভোক্তাদের কাছে পৌছাতে পৌছাতে এগুলো আর ভালো থাকেনা,আর কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী ব্যাবসার জন্য অনেক রকম ক্যামিকেল মিশিয়ে আমাদের কাছে তরতাজা দেখিয়ে বিক্রি করেন আর আমরা সেগুলো খেয়ে শক্তি পাওয়া তো দুরের আরও রোগা হয়ে যাই।
এক গবেষণায় দেখা গেছে আপেলের চেয়ে অনেক গুন বেশি ভিটামিন আছে আমাদের দেশি পেয়ারাতে।
যাইহোক মাল্টা এখন আমাদের দেশেই চাষ হচ্ছে এবং তার ফিডব্যাকও বেশ ভালো আসছে,স্বাদে মানে সেরা।টাংগাইলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে মাল্টার চাষ শুরু হয়েছে।
দেশী মাল্টা মানে ই যে টক মাল্টা তা কিন্তু এখনকার তথ্যমতে ভিত্তিহীন।। জাম্বুরা এবং কমলা র সংকরায়ন এর ফলে বারি মাল্টা ১ উদ্ভাবন হয়েছে যা আমাদের দেশের ও বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে মাল্টা এবং তা সুমিষ্ট।
সাইট্রাস জাতীয় এক ধরণের ফল হলো।মাল্টা। বাংলাদেশে মাল্টার এত চাহিদা যে বিশ্বে মোট মাল্টা আমদানীকৃত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম এবং আমাদের দেশে বিদেশী ফলের মাঝে সবথেকে বেশি আমদানি হয় আপেল এবং এর পর ই রয়েছে মাল্টার অবস্থান।
গত অর্থবছরে মাল্টা আমদানী হয়েছে ১৯ কোটি ৯১ লাখ কেজি মাল্টা।।এই তথ্য থেকেই আন্দাজ করা যায় মাল্টার চাহিদা কি পরিমান আমাদের দেশে।
এই ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ফলটির অভিযোজন ক্ষমতা কমলা র থেকে ও বেশি তাই এটি এখন সহজে ই চাষ করা হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
অপেক্ষাকৃত উঁচু মাটি যেখানে পানি জমেনা এমন জায়গা মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। এবং এসব বিবেচণায় টাংগাইল এর ঘাটাইল এর মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী বিবেচিত হয়েছে এবং এখানে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টার চাষ এবং শুধু তাই নয় পাওয়া যাচ্ছে মাল্টার বাম্পার ফলন ও।
ঘাটাইল জেলার উত্তর সীমান্তে রসুলপুর গ্রামে মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় শামসুল আলম নামক একজন ব্যক্তি কে দিয়ে, যিনি ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষক। তার হাত ধরে সেই কয়েক বছর আগে ই শুরু হয় ৭ একর জমিতে মালটা ফলের বাগান, কিন্তু এখন আর তা এটুকুতে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পরেছে অনেক গ্রামে।
এখন ঘাটাইল সদর উপজেলাসহ, শালিয়াবহ, মধুপুর এর বেতবাড়ি গ্রাম সহ সখীপুরের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে মাল্টার।
২ হেক্টর এর বেশি জায়গা জুড়ে শুধু মাল্টার চাষ হচ্ছে। চারা গাছ লাগানোর পর থেকে ৩ বছর এর মত সময় লাগে। অনেক সময় ২য় বছরেই ফল আসে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক গাছ হওয়ার আগের ফল পরিপক্ক না করা ই ভালো গাছের জন্য এবং পরিবর্তী ফলন এর জন্য৷ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি তে ফুল আসলে সেই ফুল থেকে ফল পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৭-৮ মাস। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে ৩০০ টি র কাছাকাছি বা বেশি মাল্টা ধরে৷
বিভিন্ন ধরণের বিদেশী ফলের ভীড়ে ক্রেতারা এখন অনেক বেশি সচেতনতায় ঝুকছেন দেশীয় ফলের প্রতি। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে আমাদের দেশি ফলের সাথে বিদেশী ফলের তুলনা হয়না। তাছাড়া মাল্টা সব সময় ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । আর তা যদি হয় দেশের মাটিতে কেমিক্যাল ফ্রি তাহলে অবশ্যই এর সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশিই তাই না।
আসুন জেনে নেয়া যাক মাল্টার কিছু গুনাগুনঃমাল্টাতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, চর্বিমুক্ত ক্যালরি, যা আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি পুষ্টির জোগান দেয়।
এক গ্লাস মাল্টার জুস ভিটামিন সি এর এত ভালো উৎস যে তা ভিটামিন সি ট্যাবলেট এর বিকল্প পুষ্টির জোগান দিতে পারে।
মাল্টা পাকস্থলী কে পরিষ্কার রাখে যার ফলে আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
মাল্টায় আছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়, দাঁত গঠনে সহায়তা করে।
মাল্টায় অবস্থিত ভিটামিন সি আমাদের কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মাল্টায় দ্রুত হজমে সহায়তা করে এবং জন্ডিস এর জন্য খুব উপকারী।
মাল্টায় উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সর্দি, জ্বর ভাব, ঠান্ডা, হাঁচি, কাশিতে খুব উপকারী ফল মাল্টা।
গুরা থেকে বুরাঅর্থাৎ বাচ্চা থেকে বয়স্ক সব বয়সের লোকেদের পছন্দের ফল হলো মাল্টা।
বাড়ির পাশে কিংবা বাড়ির উঠোনেও শুরু করতে পারেন এই মাল্টার চাষ।মাল্টা বিভিন্ন বাগান থেকে কালেক্ট করেও শুরু করতে পারেন অনলাইনে ব্যবসায়।
হাসান সরকার ছালেহীন।
আওয়ার টাংগাইল ডট কম।