টাঙ্গাইলের সম্ভাবনাময় পণ্য আনারস

আনারস😇
আহা নাম শুনেই যেন জিভে জল আসে টস টস😋আমি তো মনে করি এটি সব ফলের বস!

আনারসের রাজধানী বলা যায়া মধুপুর কে ,আনারসে মধুর স্বাদ  লেগে থাকে মুখে মুখে😍

দক্ষিণ আমেরিকায় এই গুচ্ছ ফল আনারসের আদি জন্মস্থান। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও কোস্টারিকা, ব্রাজিল এবং ফিলিপাইন এই তিনটি দেশ একত্রে বিশ্বের সমগ্র আনারস উৎপাদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে থাকে।
২০১৮ সালে সারাবিশ্বে আনারসের উৎপাদন ছিলো ২৭৯ লক্ষ টন। সবথেকে বেশি উৎপাদন করেছিলো কোস্টারিকা। এরপর বৃহত্তর উৎপাদক হিসেবে যথাক্রমে ফিলিপাইন, ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড। 


টাংগাইলের মধুপুরের মাটি বেলে দো-আশ এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পানি জমে থাকে না, যার ফলে এটি আনারস চাষের উপযোগী। মধুপুরের অধিকাংশ এলাকা জুড়েই হয় আনারসের চাষ। 
শ্রাবণের শেষ অবধি যেনো বাতাসে উড়ে বেড়ায় পাকা আনারসের ঘ্রাণ। এই মিষ্টি ঘ্রাণের কারণে বন্য প্রাণী ও পাখির যেনো ঈদ চলে পুরো মৌসুম জুড়ে। 
প্রতি বাড়িতে চলে আনারসের আচার বানানোর আনন্দ । সেই সাথে মধুপুরের জলছত্র বাজারে বসে সবথেকে বড় বাজার। যেখানে উপজেলার অরণখোলা, আউশনাড়া, শোলাকুড়ি, পচিশ মাইল থেকে জলছত্র বাজারে আনারস আসে, জলছত্র বাজারকে বলা হয় আনারসের রাজধানী। 


আনারসের হাট নিয়ে একটা প্রামাণ্য চিত্র ধারন করার প্ল্যান চলছে শিগ্রই ইউটিউবে দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।আওয়ার টাংগাইল ইউটিউব চ্যানেলে।
ভরা মৌসুমে এখানে দেখা যায় চারদিকে আনারসের ছড়াছড়ি,কবির সেই লাইনের কথা মনে পড়ে যায় এখানটায় এলে,ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট এ তরী,আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি,সেরকম, ঠাই নাই ঠাই ছোট সাইকেল কিংবা ভ্যানগাড়ি জুড়ি ,মিষ্টিআনারসে যেন গিয়েছে ভরি😍


যেহেতু এখানে প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয় তাই এখানকার চাষিরা নতুন নতুন জাতের আনারস পরিক্ষামুলক ভাবেও চাষ করছেন।তারমধ্যে একটি জাত হচ্ছে জলডুগি  আনারস। যা সাইজে একটু ছোট তবে অনেক মিষ্টি ও অন্য আনারসের থেকে কম সময়ে ফলন দেয়। 
এবছর  মধুপুরে ছয় হাজার তিনশত আটা নব্বই হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৩৪ মেট্রিকটন আনারস। সংখ্যার দিক থেকে যা ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টিরও বেশি।
 মধুপুরে আনারস চাষির সংখ্যা হচ্ছে ১৩ হাজার ৭৫০ জন। এছাড়াও নিজ আঙ্গিনার আশেপাশের জমিতেও কম বেশি চাষ করছেন প্রায় সব পরিবারের মানুষই। 


বর্তমানে চাষিরা নিজেদের খরচ কমাতে আনারসের ব্যাবহার করছে হরমোন। যার  কারণে আনারসের আগের মধুর ঘ্রাণ টা কমে যাচ্ছে, সাথে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন আসল স্বাদটাও। চাষীরা জানান, আনারস গাছে ফল আসতে ১৫-১৬ মাস সময় নিয়ে নেয় যা পরিপক্ক হতে প্রায় ২১-২২ মাস সময়। এতোদিনে আমাদের অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। 
কাঠাল, আম,কলা,লিচু, জাম, পেপে সহ অনেক ফল  যেখানে ১২ মাসেই প্রফিট এনে দিচ্ছে, সেখানে আনারস চাষের সময়টা একটু বেশিই হয়ে যায়।।তারপরেও যতটা আশা নিয়ে আমরা ২ বছর অপেক্ষা করি ন্যায্য মুল্য না পাওয়ায় অনেকেই আনারস চাষের আগ্রহ হারাচ্ছে, আবার কেউ কেউ নানা রকম ক্যামিকেল ও হরমোন দিয়ে পাকিয়ে অসময়ে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।


সরকার যদি আমাদের দিকে একটু মুখ তুলে তাকান এবং আমাদের কিছু সুযোগ সুবিধা করে দেব তাহলে আগের মতই অকৃত্রিম স্বাদের আনারস আমরা দিতে পারব ইনশাআল্লাহ। 

আনারস চাষে কিছু পরিবর্তন এনে বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে-
🔘আনারস বিক্রি হাট নির্ভর না হয়ে ই কমার্সের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি করলে ভালো প্রফিট করা যেতে পারে।
🔘 আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে এবং তা থেকে ভালো কিছু আশা করাই যায়।
🔘 জুস ফ্যাক্টরি তৈরি করা যেতে পারে,যেহেতু কাচামালের প্রচুর আছে এখানে তাই একটা নয় কয়েক্টা জুস ফ্যাক্টরি এখানে করা যেতে পারে।
🔘 জ্বালানিতেও বেশ ভুমিকা পালন করে আনারসের গাছ ও পাতা।
🔘 আনারস বাগানে পেপে, আদা, হলুদ চাষ করে আয় ও উতপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
🔘আনারসকে  আবার ব্যবহার করা যায় সবজি হিসেবেও। যেমন কচি আনারসকে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায়। আনারসের আচার ও অনেক বেশি জনপ্রিয়। 

আসুন যেনে নেই আনারসের কিছু উপকারিতাঃ
☑️আনারসের অনেক ঔষধি গুনাগুন ও রয়েছে। যেমন জ্বর এসেছে মানেই আনারস খেলে ভালো হবে এ কথা কিন্তু মানুষ এমনি এমনিই বলে না, উপকারী তো অবশ্যই। 
☑️ আনারসের জুস ওজন কমাতে সাহায্য করে কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। 
☑️আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করে। 
☑️ আনারসের ক্যালসিয়াম দাতেঁর সুরক্ষায় করে। মাড়ির যেকোন সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর। 
☑️চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় – বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতি দিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। 
☑️এছাড়াও হজম শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। 


হাসান সরকার ছালেহীন, আওয়ার টাংগাইল ডট কম