ঘাটাইলের উই লাখপতি উদ্যোক্তা সাদিকুন নাহার শান্তা
আমি সাদিকুন নাহার শান্তা। সম্মান তৃতীয় বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে কুমুদিনী সরকারি কলেজ, টাংগাইলে অধ্যায়নয়ত আছি। বরাবরই কাজ করতে ভালো লাগে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক হাতের কাজ করতাম। বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। শুধু মেয়ে আর বউ হয়ে থাকার বাহিরেও আমার নিজেস্ব একটা পরিচয় যেন আমার থাকতেই হবে। এরকম অদম্য জেদ আর প্রবল ইচ্ছে শক্তির জোরে নিজের স্বপ্ন থেকে কখনো পিছুপা হইনি। গ্রামে বড় হওয়ার সুবাদে প্রাইমারী স্কুল পার হতে না হতেই গ্রামের নীতি অনুযায়ী বিয়ের প্রপোজাল আসতে শুরু করে বাবা মা বিরক্ত হয়ে একটা সময় বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু ওই যে আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছে আমাকে আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ভালো ছাত্রী হওয়ার সুবাদে স্যার, ম্যামদের চোখের মনি হয়ে ছিলাম। আমাকে সব সময় ওনারা সাপোর্ট করতো। এভাবে স্কুল কলেজ পার করে ভার্সিটি লাইফ চলে আসলো। বিভিন্ন পাবলিক ভার্সিটি তে এডমিশন টেস্ট দিলাম কোথাও ওয়েটিং কোথাও বা লিস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন। মন ভেঙ্গে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে সাত কলেজে এডমিশন টেস্টে পজিশন ভালো আসলো। ভর্তিও হয়ে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু একা একা ঢাকা তে থাকা সম্ভব মনে হলো না বলে ন্যাশনালে চলে আসলাম। টাংগাইল আসার পর থেকেও কিছু না কিছু করে যাচ্ছি। টিউশনি করতে পছন্দ করতাম কারন পড়তে আর পড়াতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। গত বছর করোনা কালিন সময়ে লকডাউন ঘোষণা করা হলো চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি। বাড়িতে গিয়েও স্টুডেন্ট পড়াতে হলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টুডেন্ট পড়াতাম। ফেইসবুক নিউজফিড ঘুরতে ঘুরতে চোখ আটকে যায় Women and E-commerce Forum WE নামক গ্রুপে। তখন গ্রুপ সম্পর্কে, বিজনেস সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিল না। গ্রুপের পোস্ট গুলো পড়তে লাগলাম, কয়েকদিন নিয়মিত গ্রুপ কে সময় দিলাম। আমি আমার করনীয় খুজে পেলাম। মাথায় বিজনেসটা ডুকে গেলো। টিউশনির টাকা থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে কাপড় কিনে নকশিকাঁথা তৈরি করলাম। ২০২০ সালের অগাস্ট মাসের ৭ তারিখে উই তে জয়েন করি। সেপ্টেম্বর মাসে এসে আমার প্রথম সেল হয় ৯০০ টাকা। আমার কাজ দেখে গ্রামের অনেক মেয়েরা কাজ করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। ইন শা আল্লাহ, তাদের সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন দেখি। ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামে থেকেই সেল হয় ৮,৬০০ টাকা। লকডাউন শিথিল হলে জানুয়ারী মাসে টাংগাইল শহরে চলে আসি। প্রথম মাসেই সেল হয় ৬,৯০০ টাকা। আস্তে আস্তে সেল বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত মোট সেল হয়েছে ১০২,৯০০ টাকা। আলহামদুলিল্লাহ উই এর হাত ধরে লাখ টাকার সেল করে লাখপতি হয়ে গেলাম। পেইজ চরকা, আমার পণ্য গুলো হলো সকল প্রকার টাংগাইল শাড়ী সহ নানা ধরনের শাড়ী, বিভিন্ন ধরনের থ্রি পিস, কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি পাঞ্জাবী, বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবী, প্রাকৃতিক চাকের মধু, নকশিকাঁথা ( আমার সিগনেচার পণ্য), রাজশাহীর বিখ্যাত আম, আমসত্ত্ব বা ম্যাঙ্গুবার ( সিগনেচার পণ্য) , বোরকা,হিজাব,খিমার সেট, শাল (চাদর)। আমার স্বপ্ন গ্রাম এবং শহরের মেয়েরা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় ঘরে বসে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে পারে। আমি আমার পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য, আমার নিজের এলাকার জন্য কাজ করতে চাই। সবাই কে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
স্বাত্বাধীকারী – চরকা
https://www.facebook.com/%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE-109421690883715/
ফেইসবুক আইডি