আমি শামীমা সুলতানা। পড়াশোনা করছি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এবং বিবাহিত এক বাচ্চার মা।পড়াশোনা,সংসার,বাচ্চা সামলে এখন একজন উদ্যেক্তাও আলহামদুলিল্লাহ। আমার শুরুটা ছিলো গতবছর করোনাকালীন সময়ে! পৃথিবী যখন থমথমে অবস্থা তখন উইয়ের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয়েছিলো আনকোরার! টাংগাইলের মেয়ে হওয়া সত্বেও কাজ করার জন্য শাড়িকে বেছে না নিয়ে খুজে নিয়েছিলাম আমার ভালোবাসা ভালোলাগার কাজ রান্নাতে! ৩০০টাকা আর নিজের স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আনকোরার কাজ শুরু হয়েছিলো হোমমেড আচার আমসত্ত্ব!
আচারের মতন জিনিস যা ২০০টাকা থেকেও শুরু হয় সেটা নিয়েই এখন পর্যন্ত আমার সেল ১লাখ ৩৬হাজার+ ধৈর্য পরিশ্রম আর সততা থাকলে যে কোন কাজেই সফল হওয়া যায়! শুরুতে অনেক বাধা বিপত্তি থাকলেও সময়ের সাথে তা অনেক সাপোর্টে পরিনত হয়েছে আমার জন্য আলহামদুলিল্লাহ! নিজেকে প্রমান করার জন্য তো অবশ্যই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালাতে হবে!বাধা বিপত্তি ছিলো আছে আর থাকবেই তারপরও কাজ করতেই হবে।
আমি আমার ছোট মেয়ে নিয়ে বাজার,কুরিয়ার,ডেলিভারি সব একা হাতেই সামলাই এখন পর্যন্ত। বাচ্চা আমাদের বোঝা না,বাচ্চাই আমাদের শক্তি! আনকোরাকে একদিন অনেক বড় ব্র্যান্ডে পরিনত করবো ইনশাআল্লাহ। আনকোরাকে পুজি করেই আরো মানুষের কর্মসংস্থান করবো একদিন ইনশাআল্লাহ। সেই লক্ষ্যেই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি! শামীমা,টাংগাইল কন্যা। সত্বাধিকারী-আনকোরা
আমি ফেরদৌসী ইসলাম সিথী।টাংগাইলের মেয়ে।এই তো সেদিনের কথা অনার্স পাস করে করোনার কবলে পরে ঘরে বসে ছিলাম।ছোট বেলা থেকে এক্টাই সপ্ন ছিলো কিছু করতেই হবে। আমি জব অথবা অন্য যে কোনো কিছু। বিবিএ করার কারনে বিজনেসের প্রতিও ছিল কিছুটা ঝোক।সে কারনেই হয়তো আজ আমি উদ্যেগক্তা। ঠিক এক বছর আগে হতাশা আমাকে ঘিরে ধরেছিল।
ঠিক তখনি আমি পেয়ে যাই আমার প্রানের গ্রুপ উই কে। ছোটোবেলা থেকে যেহেতু আকাআকি টা বেশ ভাল পারতাম তাই এটা কে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।সেই শুরু থেকেই আমার কাজ সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। আমার হ্যান্ডপেইন্ট প্রডাক্ট গুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে গেছে সাথে দেশের বাহিরেও পাঠিয়েছি কয়েকবার আলহামদুলিল্লাহ। টাংগাইল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমার হ্যান্ডপেইন্ট পন্যের মাধ্যমে। আলহামদুলিল্লাহ গত ১ বছরে আমি শুধুমাত্র হ্যান্ডপেইন্টের পন্য সেল করে আয় করেছি ৩ লক্ষ এর বেশি।
কাজগুলো যেহেতু খুব নিখুত ভাবে করতে হয় তাই এই টুকু আসতে আমার অনেক কস্ট হয়েছে তবুও আমি সব সময় আলহামদুলিল্লাহ বলি কারন আমার পরিবার অনেক খুশি।আমার পরিবার থেকে আমি সব সময় সাপোর্ট পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য বলা চলে। কাজের শুরুতে ইচ্ছে ছিল আমার মনের রঙ তুলি দিয়ে সবাইকে রঙিন করবো আর সেই ভাবনা থেকে আমার উদ্যেগের নাম দেওয়া হয়”ইচ্ছে রঙিন ” ইচ্ছে রঙিন কে এখন দশ জনে চিনে এটাই আমার সার্থকতা। ইনশাআল্লাহ ইচ্ছে রঙিন কে একদিন দেশ-বিদেশের সবাই চিনবে সেই কামনায় এগিয়ে যাচ্ছি।
যিনি পাটের শাড়ি নিয়ে কাজ করে কিছুদিন আগেই লাখপতি হয়েছেন চলুন আজ শুনব তার কথা,উনার সেল আপডেট ১৪৬৫৬০/-।
আমি তানজিন তালুকদার তনু অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সাদত কলেজ, করটিয়া,টাংগাইল। টাংগাইল এর মেয়ে হিসেবে টাংগাইলের তাঁতের শাড়ির প্রতি ভালোবাসা শাড়ি পড়া বুঝতে শুরু করেছি পর থেকেই।তবে খুব খারাপ লাগতো যখন দেখতাম মানুষ এতো সুন্দর সুন্দর দেশি শাড়ি বা পোশাক রেখে বিদেশি পণ্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দেশি পণ্যকে ছোট করে দেখে বিদেশি পণ্য নিয়ে মাতামাতি মনটাকে ভীষণ ভাবে ব্যথিত করতো। তখন থেকেই চিন্তা নিজের এলাকার তাঁত শিল্প নিয়ে কিছু করার।
স্বপ্নটা আরো ৫/৬বছর আগের হলেও শুরু করার সাহস পেয়েছি গতবছর মানে ২০২০ সালের ১০ই জুলাই লকডাউনের সময় উইয়ের কল্যাণে। উই আর ডিএসবি থেকেই উদ্যোক্তা হবার বেসিক গুলো কিছু কিছু শিখে শুরু করি আমার উদ্যোক্তা জীবন। কাজের সাথে সাথে আরো শিখছি জানছি।তবে এর সম্পূর্ণ কৃতিত্বই Razib Ahmed স্যার এর। আমি মূলত টাংগাইল তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করলেও আমার উদ্যোগ শুরুর তিন মাসের মাথায় আমি আমাদের টাংগাইল তাঁতের পাটের শাড়ির সন্ধান পাই।ছোট বেলায় পড়া কবি আহসান হাবীবের “ইচ্ছে” কবিতার সেই পাটের শাড়ি যে কখনো দেখতে পাবো তা কল্পনাতেই ছিলোনা।
আর একেই যখন নিজের জেলার তাঁতে পেয়ে গেলাম আর জানলাম যে এই পাটের শাড়ি আমাদের টাংগাইলেই বোনা হয়।তখনই মনে মনে পরিকল্পনা করলাম এটা নিয়ে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। এক সময় টাংগাইল তাঁতের বিখ্যাত শাড়ি ছিলো এই পাটের শাড়ি আর কালের বিবর্তনে তা হারাতে বসেছে, যা নতুন প্রজন্মের কাছে একদমই অপরিচিত হয়ে গেছে। সবকিছু চিন্তা করে পাটের শাড়িকেই করলাম নিজের উদ্যোগের সিগনেচার পণ্য।এটা নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম আর পোস্ট করার মাধ্যমে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করতে শুরু করলাম। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার পরিবারের সাপোর্ট ছিলো না বললেই চলে।আসলে বাবা ভয় পেতেন পড়াশোনার মাঝে এমন একটা কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেললে আমার পড়াশোনার প্রতি অনীহা তৈরি হয়ে যেতে পারে।তবে ছোট বোনটা ছোট মানুষ হলেও বড় বোনের মতো সাহস জুগিয়েছে আর সাপোর্ট দিয়েছে শুরু থেকেই।
পড়াশোনা ঠিক রেখেই উদ্যোগটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে বাবাও এখন বেশ খুশি আর যার সাপোর্ট টা পড়াশোনার মধ্যে আমাকে উদ্যোক্তা হবার সাহস জুগিয়েছে সবচেয়ে তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের আসমা সিদ্দিকা ম্যাম।তিনি শুধু আমার ম্যাম নয় আমার মামণি।মামণিই বলেছিলেন “পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করাটা খারাপ নয় বরং তুমি যে কাজ টা করতে যাচ্ছো তা যেমন তোমাকে নিজের পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করবে তেমনি এই জেলার তাঁত শিল্পও আরো কিছুটা এগিয়ে যাবে তোমার কাজের মাধ্যমে।” মামণির এই সাপোর্টটাই ছিলো আমার ঐ সময় সবচেয়ে বড় সাহস।এবং কার্যত মামণিই ছিলেন পিউনির প্রথম ক্রেতা।
সর্বোপরি যাদের ছাড়া আসলে উদ্যোগ টা বাস্তবে রূপই পেতো না তারা আমার দুইজন সহপাঠী, আমার বেস্ট ফেন্ড রাবেয়া আক্তার(Mounota Momo) এবং লিখন মাহমুদ। যেহেতু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে আমার একার পক্ষে এই উদ্যোগ টা চালানো সম্ভব ছিলো না, ওরাই আমার চিন্তাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে আমার সহযোগী হয়ে পাশে দাঁড়ালো। হ্যাঁ আমরা তিন বন্ধু মিলেই উদ্যোগ টা শুরু করলাম। আমি অনলাইনটা সামলালেও অফলাইনে ওদের ভূমিকাই বেশি। মূলত ফোকাস করছি এখন আমাদের হারাতে বসা ঐতিহ্য পাটের শাড়ি সম্পর্কে মানুষকে জানানো।পাটের শাড়িকে আবার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে পাট বস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট করতে পাট বস্ত্রের নতুন নতুন ফিউশন নিয়ে আসা। বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে পাট পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।আমরা চেষ্টা করবো দেশের বাইরেও আমাদের দেশের এই ঐতিহ্যকে(পাট বস্ত্র)পৌঁছে দিতে। ইনশাআল্লাহ পিউনির মাধ্যমে পাটের শাড়িকে আবার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে আশা রাখি।
বাংলাদেশের মৃৎশিল্প সভ্যতার শুরু থেকেই এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।সভ্য জাতি হওয়ার চিন্তা থেকেই মানুষের সমাজবদ্ধ জীবন যাপন।প্রাচীন কালে মানুষ বনের পশু পাখি আগুনে পুরিয়ে খেলেও আস্তে আস্তে এটার পরিবর্তন হতে থাকে। মানুষ রান্না করা শিখে আর সেই রান্নার তাগিদ থেকেই তারা হাঁড়ি পাতিলের অভাব অনুভব করে।তখনও তাদের মধ্যে কাসা পিতল সীসা ব্যবহার করে হাড়ি পাতিল তৈরী করার মতো পরিবর্তন আসে নি। আর তখন তারা মাটি দিয়ে পাতিল তৈরী করে আগুন ব্যবহার করে রান্নার চিন্তা করে।ধীরে ধীরে সব কাজে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয়। এভাবেই মৃৎশিল্পে প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে নানা রকম খেলনা ও শো পিস তৈরী করে যা ঘর সাজাতে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ যারা মৃৎশিল্প নিয়ে কাজ করে তাদের কুমাড় বলা হয়।সনাতন ধর্মের লোকের মধ্যে পালেরা মূলত মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। টাংগাইল জেলার বেশ কিছু উপজেলায় এখনো কিছু এলাকা জুরে মৃৎশিল্পের কাজ হয়ে থাকে।তারমধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ৯৯ টি পরিবার,নাগরপুর উপজেলায় ১০৭ টি, বাসাইলে ১১৫ টি, ঘাটাইলে ৬০ টি,ভূঞাপুরে ২২০ টি, গোপালপুরে ১১২,কালিহাতিতে ২৮০ টি, ধনবাড়িতে ১০ টি এবল মধুপুরে ৯ টি, এবং টাংগাইল সদর উপজেলায় ১৫৮টি কুমাড় পরিবার বসবাস করছে।১ হাজারের বেশি পরিবার এখনো এই কাজের সাথে জড়িত। বাসাইল উপজেলায় মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক পরিবার কাজ করে তার মধ্যে একটি পাড়া বাসাইল পৌড়সভার খুব কাছেই তার নাম কুমাড়পাড়া।
বাসাইলে আরো একটি কুমাড়পাড়া আছে রাশরা তে যেখানে এখনো সব রকম প্রতিবন্ধকতা ভুলে তৈরী হচ্ছে মৃৎশিল্পের বাহারী রকমের জিনিস। আজ ঘুরে এলাম টাংগাইল জেলার মৃৎশিল্প এলাকা থেকে। টাংগাইলে মৃৎশিল্প এলাকার মধ্যে কালিহাতি উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের বল্লার পাল পাড়াতে ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার এখনো টুকিটাকি মৃৎশিল্পের কাজ করে যাচ্ছে।কিন্তু বর্তমানে কেউ ই এই পেশার আয় থেকেই জীবিকা নির্ভর করছে না, বলা চলে করতে পারছে না।তাদের বাপ দাদার কাজ ছেড়ে তাদের করতে হচ্ছে অন্য কাজ। পালপাড়ার খিতিশপালের স্ত্রী (৮০-৯০বছর)কে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তার জন্মের আগে থেকে এমন কি তার বাপ দাদার আগে থেকেই তার পূর্বপুরুষরা এই পেশার সাথে জড়িত।খিতিশপালের বাবা সূর্যকান্তপাল এবং দাদা যাদবপাল এই পেশার সাথেই জড়িত ছিলো।জানা যায় তাদের আরও পূর্ব পুরুষেরাও নাকি এই পেশার সাথে জড়িত ছিলো।তাই তারা এই কাজ কবে শুরু করে এবং তাদের পূর্ব পুরুষেরা কত সাল নাগাত এই বল্লাতে বসতি স্থাপন করে জানতে চাইলে তারা সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি।কেবল বলেছে তাদের পূর্ব পুরুষের জন্মও এই বল্লার মাটিতেই।তাদের এই পেশা কবে থেকে শুরু হয় জানতে চাইলেও সেই একই উত্তর পাওয়া যায়। তার পূর্ব পুরুষেরা এই পেশার সাথেই জড়িত ছিলো।যা বৃটিশ আমলকেও ছাড়িয়ে যায়।২০০ ২৫০ বছরেরও আগে এই পেশার সাথে জড়িত বলতে গেলে সভ্যতার শুরু থেকে যখন এই পেশা শুরু হয় তখন তাদের পূর্ব পুরুষেরা এই কাজের সাথে জড়িত হয় এবং বংশ পরম্পরায় তারা তাদের এই কাজটিকে ধরে রেখেছে।যদিও আগের মতো আয় বা চাহিদা নেই তাদের জিনিসের।তবু পারিবারিক ভাবেই কিছু কিছু পণ্য তৈরী করছে তারা।
বাড়ির মহিলাদের আয়ের উৎস এই মৃৎশিল্প। সারাদিন বাড়িতে বসে এই কাজ গুলোই করেন তারা।তাছাড়া বাড়ির ছোট বাচ্চারাও কাজে হাত লাগায় ছোটবেলা থেকেই। ৪ বিঘা জায়গা জুরে পাল পাড়ায় প্রতিটি ঘরের মানুষ এই কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু তাদের সমস্যা হয়েছে এক জায়গাতে,,বর্তমানে তাদের পণ্যের চাহিদা কম।স্থানীয় ভাবে কিছু চাহিদা থাকলেও বাইরে চাহিদা না থাকায় তাদের কাজের পরিমান সীমিত। গ্রামে এখনো কুয়ো করা হয় তাই এইসব কাজে তাদের একটু চাহিদা রয়েছে।বল্লাতে দই খুব জনপ্রিয় হওয়াতে আর বাইরেও দইয়ের চাহিদা থাকার কারনে প্রচুর দই তৈরী হয় প্রতিদিন।দই পাতার হাড়ির চাহিদা তাই এখনো কমে যায় নি।এই দুইটি জিনিসের চাহিদা আছে বলেই কিছু কুমাড় কোন রকম খেয়ে পরে জীবন যাপন করতে পারছে। তাছাড়া মাটির হাড়ি,কলসি,ঠিলা,সরা,সানকি, মুড়ি ভাজার হাড়ি,জান্জর ইত্যাদি তৈরী হয় সীমিত চাহিদা মিটানোর জন্য।তাছাড়া বছরের ঈদ পুজা বার্বণ, বৈশাখী মেলাতে মাটির খেলনা তৈরী করা হয় বিক্রির জন্য যদিও চাহিদা খুব বেশি নয়।ইলেকট্রনিক যন্ত্র কেড়ে নিয়েছে বাচ্চাদের জীবন থেকে এইসব মাটির খেলনা গুলো।মাটির তৈরী ব্যাংক ছিলো আগের মানুষের সঞ্চয়ের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল একাউন্ট হওয়াতে ব্যাংক শুধু মাত্র শখের জিনিস এখন। অতীতে তাদের মাটির জিনিস বিক্রি করে টাকার পরিমান কম হলেও বিক্রির পরিমান বেশি ছিলো।
মুদ্রার স্ফীতির জন্য তাদের আয় বেশি দেখালেও তা জীবন ধারনের জন্য অতি সামান্য। বৃদ্ধ মহিলাটি তার কথায় সেরকম কিছুই বুঝাতে চেয়েছিলেন। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই মৃৎশিল্প। কিন্তু মাটির জিনিসের ব্যবহার আমাদের শরীর এবং মনের জন্য উপকারী। যদিও এই বিষয় নিয়ে মানুষের তেমন ধারনা নেই। বর্তমানে ই কমার্সে মাটির জিনিস অন্তর্ভুক্ত হলেও তা সব এলাকার কুমাড় সম্প্রদায়ের কাছে পৌছাইনি।এলাকা ভিত্তিক ই কমার্স উদ্যোক্তারা যদি এই সকল কুমাড় সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে কাজ করে তাহলে এই সম্প্রদায়ের লোকেদের নিজেদের শিল্পকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব হবে এবং তার সাথে মানুষকেও মৃৎশিল্পের উপকারিতা সম্পর্কে জানানো সম্ভব হবে।তাতে হয়তো আবার এই শিল্পের চাহিদা বাড়বে এবং বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। ই কমার্সের ছোয়া লাগলে মৃতপ্রায় মৃৎশিল্প হয়ে উঠতে পারে পুনরুজ্জীবিত। বর্তমানে মানুষ খুবই সৌখিন। সৌখিনতার জন্যও মানুষ মাটির তৈরী জিনিস জায়গা দিতে পারে নিজেদের ড্রয়িং রুমে।কিন্তু নদীভরাট ও নদীর নব্যতা কমে যাওয়া মৃৎশিল্পের অন্যতম প্রধান সমস্যা।চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল এখন আর পাওয়া যায় না। তাছাড়া জায়গার এভাবেও বর্তমানে এই শিল্পের তেমন প্রসার হচ্ছে না।কিন্তু এখনো এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ই কমার্স ও দেশি পণ্যের প্লাটফর্ম women and e Commerce forum(we) এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
একজন কুমোড়ের হাতের ছোয়ায় একদলা মাটি দিয়ে তারা চাহিদা অনুযায়ী যেকোন আকৃতি করে দিতে সম্ভব। তাদের এই প্রতিভাকে বাচিয়ে রাখতে ই কমার্সের গুরুত্ব অনেক।বর্তমানে ই কমার্স ই পারে মৃতপ্রায় দেশি শিল্প গুলো বাচিয়ে রাখতে।টাংগাইলের এই মৃৎশিল্প কে বাঁচিয়ে রাখতে টাংগাইলের ই কমার্স উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে এই শিল্প কে আরো দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। কালিহাতির বল্লা ছাড়াও রতনগঞ্জ,ঘোনাবাড়ি,হামিদপুরের বেতডোবা,নাগবাড়ি ইউনিয়নের কুমোড়িয়া পাড়াসহ, ধানগড়াতে বেশ কিছু গ্রামে এখনও কিছু পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।টাংগাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে কালিহাতি তে সবচেয়ে বেশি কুমাড় পরিবার রয়েছে। আর এইসব পরিবারকে যদি সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা যায় এবং ই কমার্স উদ্যোক্তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এই শিল্পকে আবার চাহিদা সম্পন্ন করে তুলতে পারবো।বেঁচে যাবে দেশীয় ঐতিহ্য। শারমিন জিয়া টাংগাইল জেলা সহপ্রতিনিধি ( Women and e commerce Forum (we)
গৃহস্থালি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের লৌহজাত পন্যের জন্য বিখ্যাত ছিল আমাদের টাংগাইল জেলার, ঘাটাইল থানার পাকুটিয়া এলাকা। আপনারা জানেন কি? এক সময় সারা দেশে না শুধু সারা বিশ্বে হই চই ফেলে দিয়েছিল এই ঘাটাইল পাকুটিয়ার কামারেরা! পাওয়ার টিলার অর্থাৎ ট্রাক্টরের ফাল আবিষ্কার করে।বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও নানা রকম আবিস্কার হওয়ার কারনে এই শিল্পিরা আজ কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কর্মকারঃ এক শ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায় এরা এখন যদিও অনেক রকম কাজে জড়িত, আগে এরা, কেউ মাটির কাজ,কেউ লোহা,পিতল,কাসার কাজ করত। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন রকম পন্য,যেমন হাড়ি,পাতিল,কলসি,ফুলের টব,মাটির ব্যাংক সহ বাচ্চাদের খেলনা,পুতুল, ঘুটি ঘটি,ঘোড়া বাঘ,ও গরুর গাড়ি এগুলো বানানোর কাজ করেন তাদের কুমার বলা হয়।
যারা স্বর্নের কাজ তথা,নানা রকম অলংকার বানানোর কাজ করেন তাদের স্বর্নকার বলে।
যারা লোহার নানা রকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বানানোর কাজ করেন তাদের কামার বলা হয়। আজ বলব এই কামারদের কাজ বা শিল্প নিয়ে।
অতীতে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে এ দেশে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। প্রতলিত লোক কাহিনি মতে,শূদ্র মহিলার সাথে দেবশিল্পি বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কামারের জন্ম হয়। কামারদের মধ্যেও আবার কয়েকটি শ্রেনী রয়েছে,যেটা বিবাহ করার ক্ষেত্রে এখনো তারা সেই স্বশ্রেণী বেছে নেয়। বসুন্দরি,রানা,গঙ্গালিরি,এবং বাহাল। এই চার শ্রেণীর ও আবার বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণী আছে।
যাই হোক আমরা এত গভিরে যাচ্ছিনা,কামার দের তৈরি জিনিস পত্র গুলো দেখে নেই।
দা,বটি,ছুরি,কাস্তে,শাবল খুন্তি,কুড়াল,হাতুর,লাংগল,ট্রাক্টরের ফাল,শিকল,পেরেক,চাপাতি,কোদাল,লোহার কড়াই সহ যাবতিয় নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক রকম লোহার যন্ত্রপাতি।
পাকুটিয়া এলাকা ঘুরে জানা জায় এ এলাকায় প্রায় ২৫০ টি পরিবার এই লোহার কাজের সাথে জড়িত ছিল।কিন্তু প্রযুক্তিগত যন্ত্রের কাছে তাদের হস্ত শিল্প হার মেনে যাওয়ায়, এখন মাত্র ৪০-৫০টি পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত আছেন।বাকিরা একেক জন একেক পেশায় জড়িয়ে গেছেন। এর কারন জানতে চাইলে তারা এই মত প্রকাশ করেন যে,
আসলে এই কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়,তাতেও আমাদের কোন সমস্যা নেই আমরা এই কাজ বাপ দাদার কাছে শিখেছি,করেছি,তখন এগুলোর অনেক টান ছিল,আমরা ন্যায্য মুজুরি বা পারিশ্রমিক পেতাম। বর্তমানে আমাদের বাইরেও অনেক জাতের মানুষ এই পেশায় জড়িয়ে, সস্তায় নিম্ন মানের জিনিস বানিয়ে কম দামে বিক্রি করায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সাধারণ মানুষ কোনটা ভালো মন্দ তা বিচার না করে কোনটা সস্তায় পাওয়া যায় তা কেনায় আমাদের ভালো মানের জিনিসের দাম ও অনেক কমে বিক্রি করতে বাধ্য হই।
তাছাড়া আমাদের সন্তানেরা সহ এই সমাজের চোখে এই পেশা নিম্নমানের ধরা হয়।এজন্য আমরাও কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তাদের পছন্দমত পেশায় যেতে দিচ্ছি। আমাদের অতীত ধরে বসে থাকলে তো আর চলবেনা,এখন এসবের তেমন দাম, নাম মান কোন কিছুই নেই তাই এটার প্রতি যে দরদ ভালবাসা ছিল তা দিন দিন কমেই যাচ্ছে,তারপরেও আমরা যারা একটু নিম্নবিত্তের তাদের অন্য কোন উপায় না থাকায় এই কাজ করেই জিবিকা নির্বাহ করছি।
সারদিন কাজ করে কত ইনকাম।হয় জানতে চাইলে তারা উত্তর দেন, সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫/৬ টা পর্যন্ত কাজ করলে আমাদের ৩৫০-৫০০ টাকা ইনকাম হয়। কিন্তু সমস্যা হলো মাসের প্রতিদিন আমরা একই রকম কাজ পাইনা,দেখাযায় কোন মাসে ১০/১৫ দিন ও বসে থাকতে হয়।
পাকুটিয়ার সবচেয়ে নামকরা কামারের বংশধর অতুল কর্মকার কে এই শিল্পের ধ্বংসের কারন জানতে চাইলে তিনি একই রকম মত ব্যাক্ত করেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে,ছেলে অন্য পেশায় আছেন,তিনি এখনো তার পেশা একাই কোন রকমে ধরে রেখেছেন।তিনি আরও বলেন,আসলে এই কাজ একা করা সম্ভব নয় মিনিমাম দুইজন লাগে এই কাজ করতে,একটা কারিগর রাখলে তার বেতন দেয়া লাগে ৫০০/৬০০ টাকা তাও কাজ করে সকাল ৮-থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।দুই জনে কাজ করলে মোটামুটি ১০০০/১৫০০ টাকার কাজ করা যায়,কিন্তু সব সময় লোক পাওয়া যায়না,আবার লোক পেলে তেমন কাজ পাওয়া যায়না।তাই আমি নিজেই টুকটাক যা পারি করি।
অতুল কর্মকারের নাতির সাথে কথা বলে তার কাছে জানতে চাই এ পেশা কি তিনি ধরে রাখবেন কিনা?
তিনি উত্তরে বলেন, আসলে আমার দাদু এই কাজ করে এটাই আমরা চাইনা,দেখতেও ভালো দেখায় না,আমার বন্ধুবান্ধবের বাপ চাচারা চাকরি বাকরি করে,আর আমরা এসব করি বললে সমাজ ও নিচু চোখে দেখে,তাই এটাতে আগ্রহ নেই।
নাতি শিক্ষিত হওয়ায় তাকে জিগ্যেস করি ই-কমার্সে আসলে এই শিল্প নিয়ে কিছু করা যায় কিনা?
তিনি বলেন,আসলে বর্তমান যুগে আবার খাঁটি পন্যের টান বাড়ায় এটা হয়ত সম্ভব,কিন্তু তার জন্য বেশ পুজি লাগবে,উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যাবহার ও ৪/৫ জন লোক নিয়ে কাজ করালে ভালো একটা প্রডাকশন বের করা সম্ভব। এই পুঁজিটা আমায় কে দেবে বলেন?
অবশেষে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলোঃ দেশ ডিজিটাল হয়েছে হয়ত কিন্তু আমাদের সমাজ,সমাজের মানুষের চিন্তাভাবনা ডিজিটাল না হওয়ায়, এবং কোন সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে,ভাল মন্দের তফাত গুলো আমাদের বুঝতে হবে,কোন কাজই ছোট নয়,এই বিষয় গুলো তাদের বুঝাতে হবে,বিভিন্ন ভাবে তাদের ক্ষুদ্র ঋৃনের ব্যাবস্থা করতে হবে। তাহলে হয়ত এই ঐতিহ্যবাহি পেশা বা শিল্পকে উদ্ধার করা যেতে পারে।।
আমি সাদিকুন নাহার শান্তা। সম্মান তৃতীয় বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে কুমুদিনী সরকারি কলেজ, টাংগাইলে অধ্যায়নয়ত আছি। বরাবরই কাজ করতে ভালো লাগে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক হাতের কাজ করতাম। বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। শুধু মেয়ে আর বউ হয়ে থাকার বাহিরেও আমার নিজেস্ব একটা পরিচয় যেন আমার থাকতেই হবে। এরকম অদম্য জেদ আর প্রবল ইচ্ছে শক্তির জোরে নিজের স্বপ্ন থেকে কখনো পিছুপা হইনি। গ্রামে বড় হওয়ার সুবাদে প্রাইমারী স্কুল পার হতে না হতেই গ্রামের নীতি অনুযায়ী বিয়ের প্রপোজাল আসতে শুরু করে বাবা মা বিরক্ত হয়ে একটা সময় বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু ওই যে আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছে আমাকে আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ভালো ছাত্রী হওয়ার সুবাদে স্যার, ম্যামদের চোখের মনি হয়ে ছিলাম। আমাকে সব সময় ওনারা সাপোর্ট করতো। এভাবে স্কুল কলেজ পার করে ভার্সিটি লাইফ চলে আসলো। বিভিন্ন পাবলিক ভার্সিটি তে এডমিশন টেস্ট দিলাম কোথাও ওয়েটিং কোথাও বা লিস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন। মন ভেঙ্গে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে সাত কলেজে এডমিশন টেস্টে পজিশন ভালো আসলো। ভর্তিও হয়ে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু একা একা ঢাকা তে থাকা সম্ভব মনে হলো না বলে ন্যাশনালে চলে আসলাম। টাংগাইল আসার পর থেকেও কিছু না কিছু করে যাচ্ছি। টিউশনি করতে পছন্দ করতাম কারন পড়তে আর পড়াতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। গত বছর করোনা কালিন সময়ে লকডাউন ঘোষণা করা হলো চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি। বাড়িতে গিয়েও স্টুডেন্ট পড়াতে হলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টুডেন্ট পড়াতাম। ফেইসবুক নিউজফিড ঘুরতে ঘুরতে চোখ আটকে যায় Women and E-commerce Forum WE নামক গ্রুপে। তখন গ্রুপ সম্পর্কে, বিজনেস সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিল না। গ্রুপের পোস্ট গুলো পড়তে লাগলাম, কয়েকদিন নিয়মিত গ্রুপ কে সময় দিলাম। আমি আমার করনীয় খুজে পেলাম। মাথায় বিজনেসটা ডুকে গেলো। টিউশনির টাকা থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে কাপড় কিনে নকশিকাঁথা তৈরি করলাম। ২০২০ সালের অগাস্ট মাসের ৭ তারিখে উই তে জয়েন করি। সেপ্টেম্বর মাসে এসে আমার প্রথম সেল হয় ৯০০ টাকা। আমার কাজ দেখে গ্রামের অনেক মেয়েরা কাজ করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। ইন শা আল্লাহ, তাদের সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন দেখি। ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামে থেকেই সেল হয় ৮,৬০০ টাকা। লকডাউন শিথিল হলে জানুয়ারী মাসে টাংগাইল শহরে চলে আসি। প্রথম মাসেই সেল হয় ৬,৯০০ টাকা। আস্তে আস্তে সেল বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত মোট সেল হয়েছে ১০২,৯০০ টাকা। আলহামদুলিল্লাহ উই এর হাত ধরে লাখ টাকার সেল করে লাখপতি হয়ে গেলাম। পেইজ চরকা, আমার পণ্য গুলো হলো সকল প্রকার টাংগাইল শাড়ী সহ নানা ধরনের শাড়ী, বিভিন্ন ধরনের থ্রি পিস, কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি পাঞ্জাবী, বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবী, প্রাকৃতিক চাকের মধু, নকশিকাঁথা ( আমার সিগনেচার পণ্য), রাজশাহীর বিখ্যাত আম, আমসত্ত্ব বা ম্যাঙ্গুবার ( সিগনেচার পণ্য) , বোরকা,হিজাব,খিমার সেট, শাল (চাদর)। আমার স্বপ্ন গ্রাম এবং শহরের মেয়েরা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় ঘরে বসে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে পারে। আমি আমার পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য, আমার নিজের এলাকার জন্য কাজ করতে চাই। সবাই কে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
তোমরা যে বলো দিবস রজনী ভালবাসা ভালবাসাভালবাসা কারে কয়?সেকি কেবল নারী পুরুষেই হয়?ভালবাসা মানে এই না যে তাকে তোমার পেতেই হবে,ভালবাসা হলো তোমার নিঃশ্বাস, যার প্রতিটিতেই তার বসবাস! ( সবই আপনি পাবেন তাও নয়,তবুও চেষ্টা করলে অসাধ্য ও সাধন হয়)
ভালবাসা মানে এই না যে তুমি তার প্রতিদূর্বল,ভালবাসা হলো তোমার শক্তি, সে পাশে থাকলে যা বাড়ে!(কাজের প্রতি দুর্বল না হয়ে,কাজটা শেষ হলে কি হবে,কেমন হবে সেটা ভেবে কাজ করুন)
ভালবাসা মানে এই না যে তার দুঃখে তুমি কাঁদবে,ভালবাসা হলো তোমার প্রচেষ্টা, যার ফলে দুঃখ গুলি কখনো তাকে ছুঁতেই পারবে না!(হাজারো বাধায় চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে,হাল ছাড়া চলবে না)
ভালবাসা মানে এই না যে সে চলে গেলে তোমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে,ভালবাসা হলো সে সুখে আছে এই কথা ভেবে তোমার মুখের এক চিলতে হাসি!( উদ্দোগে ধরা খেলে,লস হলে শেষ করে দিবেন সব?)
ভালবাসা মানে এই না যে সম্পর্ক শেষে তাকে ঘৃণা করা,ভালবাসা হলো আরেকটা নতুন জীবন, তার আগমনে যার শুরু তোমার মৃত্যুতে যার শেষ!(কোন উদ্যোগে আপনার সব হারিয়ে গেলেও,আবার নতুন করে, ভুল গুলো শুধরে আবার শুরু করুন,ইনশাআল্লাহ এইবার জয় নিশ্চিত)
আচ্ছা বলেন তো ভালবাসা কি শুধু নারী পুরুষেই হয়?আমার মতে না,আমার প্রিয় বাইকটিও আমার ভালবাসা।যার যত্ন আমি নিয়মিত নেই,তার কিছু হলে আমারও কলিজায় লাগে।
আমার নিত্যদিনের সংগী ফোনটাও আমার ভালবাসা।হঠাৎ স্লো হয়ে গেলে বা হ্যাং হলেই কেমন ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।আমার ব্যাবহার করা ল্যাপটপ টাও আমার ভালবাসা,যার কিছু হলে অনেক কষ্ট হয়।
আমার ক্যামেরা টাও আমার ভালবাসা যার নিয়মিত যত্ন নিতে হিয়।যত্ন করে বাড়ির আংগীনায় লাগানো ফুল গাছটাও আমার ভালবাসা।প্রতিদিনের কাজটা যা দিয়ে আমি এবং আমার পরিবার চলে তাও আমার ভালবাসা।
যাদের জন্য দিনরাত খেটে রোজগার করি তারাও আমার ভালবাসা।যারা না খেয়ে বসে থাকে আমি ফিরলে এক সাথে খাবে বলে তারাও আমার ভালবাসা।
যে মানুষ গুলো থেকে শিখছি প্রতিনিয়ত তারাও আমার ভালবাসা। যারা আমার হাবি জাবি লেখা দেখেও উৎসাহিত করে যাচ্ছেন তারাও আমার ভালবাসা।এই মাত্র এই পোস্টটি আপনি যে মনযোগ ও সময় দিয়ে পড়ছেন আপনিও আমার ভালবাসা।
মাত্র স্ক্রল করে চলে যাওয়া লোকটিও আমার ভালবাসা।(তাকে ইম্প্রেস করতে আরও ভাল লেখার চেষ্টা করব।)আমাদের একজন প্রিয় স্যার ছিলেন,তিনি দেখতে অনেক সুদর্শন ও স্মার্ট ছিলেন।তিনি একজন কে বিয়ে করেন যিনি একটু নয় বেশ ময়লাই ছিলেন।স্যার বউ কে নিয়ে ফিরছিলেন পথে স্যারের এক চাচা তাকে ডেকে বললেন,কিরে মাঈন এই কালা ছাগলডা কুন থিকা ধইরা আনলি?(মস্করা করে কালো রঙ বোঝাতে ছাগল বলেছেন)(কালো মহিলাটা কোথা থেকে ধরে এনেছিস??)
মাঈন স্যার হেসে বললেন চাচা আমার চোখ টা যদি আপনার চোখে লাগাই দিতে পারতাম তাহলে বুঝতেন, সে কালো ছাগল নাকি জান্নাতি হুর।স্যারের মুখ থেকেই শুনা। তো কাজের কথা হলো,ভাল চোখে দেখলে দুনিয়ার সব কিছুতেই ভালবাসা পাবেন,ভালটাই দেখবেন।
আজ যাকে দেখে আপনার ভাল লাগছে না,ক্ষেত গাইয়া ভুত মনে হচ্ছে, তার সাথে একটু মিশলেই আবিস্কার করবেন সে তামা নাকি সোনা।দূর থেকে মানুষ কে যায়না চেনা।এই জন্যই বোধহয় অনেক শিল্পি গান গেয়েছেন,ভালবাসা ভাল নয় এই কথাটি সত্যি নয়ভালবেসেই জয় করা যায় মানুষের হৃদয়।
আবার,পাথরে ফুল,আর সাগরের ঢেউ ও থামিয়েছেন অনেকে।সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে,হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যিনি সারা জাহানের বাদশা হয়েও,উনার পথে কাটা দেয়া বুড়িমার মন জয় করেছিলেন শুধু ভাল ব্যবহার ও ভালবাসা দিয়ে।শুধু বুড়ি মার নয় তার সবচেয়ে বড় বড় শুত্রুকেও এই ভালবাসা আর সুন্দর ব্যাবহার দিয়ে জয় করেছিলেন।।সোজা কথায়,ভালবাসা হচ্ছে, ভালবাসার মানুষ,প্রানি, উদ্ভিদ, বস্তু যাই হোক তাকে ভাল রাখা বা ভাল রাখার আপ্রান চেষ্টা করা।