আগে আমরা পরতাম ভাতে মাছে বাংগালী কিন্তু আজকের যুগে এসে আমরা হয়ে গেছি ভর্তা ডালে বাংগালী। আলু ভর্তা আর ডাল হলে আর কি লাগে বলেন,আমার তো আর কিছু দরকারই নেই।
যাই হোক নতুন জাতের এই আমেরিকান জাতের এই আলু যে খেয়েছে সত্যি সেই এর প্রেমে পড়ে গিয়েছে বিশেষ করে এই আলু ভর্তা অন্য আলুর চেয়ে অনেক বেশি স্বাদের। অন্যান্য এলাকায় বেশ আগে থেকে এই আলু পাওয়া গেলেও আমাদের টাংগাইলে বেশ ক বছর ধরে দেখা মিলছে, পরিক্ষামুলক ভাবে চাষ করে জানা যায় এই আলুর ফলন ও অন্য আলুর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে,শতাংশে প্রায় দুইমন করেও নাকি আলু তারা উঠিয়েছেন,বাজারেও এর চাহিদা অন্য আলুর চেয়ে অনেক বেশি।
দেখতে জামের মতই আকারে একটু লম্বা, এটি সিদ্ধ করলে ভেতরে লাল হয়ে যায়,যেমন টা জামের ভিতরে হয়,হয়ত এই কারনেই এই আলুকে জাম আলু কয় তবে জাম খেলে দাতের রঙ বদলালেও এই আলু খেলে কিন্তু বদলায় না।
যারা খাননি এই জাম আলু তাদের প্রতি রিকোয়েস্ট থাকবে একবার খেয়ে দেখবেন।একদম ভরতা ভাতের বাংগালী হয়ে যাবেন। যেহেতু এই আলুর ফলন ভালো,এর উপকারিতাও অন্য আলুর চেয়ে বেশি,বাজারে এর চাহিদা ও মুল্য অন্য আলুর চেয়ে বেশি তাই এটা হতে পারে আপনার উদ্যোগের একটি পণ্য,যা বেচে হয়ে যেতে পারেন আপনি ধন্য,অপর দিকে কাস্টমারও খুশি পেয়ে খাটি পণ্য।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় যে এই আলুর উৎপাদনের উপর একটা প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এসব নতুন নতুন ফলস উৎপাদনে আগ্রহি করার চেষ্টা চলছে অনবরত।
সত্যি আমাদের টাংগাইলে এত এত সোনার খনি আছে যে আমরা যদি এগুলো ই কমার্সে নিয়ে আসতে পারি তবে সত্যি ভাল কিছুই সম্ভব।।
মাল্টা আঙুর,আপেল কমলা আর মাল্টা এগুলোর নাম এলেই কেমন যেন ফরেন ফরেন একটা ভাব আসে না?আসলে এই ফরেন ফল গুলো ভালো হলেও আমাদের ভোক্তাদের কাছে পৌছাতে পৌছাতে এগুলো আর ভালো থাকেনা,আর কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী ব্যাবসার জন্য অনেক রকম ক্যামিকেল মিশিয়ে আমাদের কাছে তরতাজা দেখিয়ে বিক্রি করেন আর আমরা সেগুলো খেয়ে শক্তি পাওয়া তো দুরের আরও রোগা হয়ে যাই।
এক গবেষণায় দেখা গেছে আপেলের চেয়ে অনেক গুন বেশি ভিটামিন আছে আমাদের দেশি পেয়ারাতে। যাইহোক মাল্টা এখন আমাদের দেশেই চাষ হচ্ছে এবং তার ফিডব্যাকও বেশ ভালো আসছে,স্বাদে মানে সেরা।টাংগাইলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে মাল্টার চাষ শুরু হয়েছে।
দেশী মাল্টা মানে ই যে টক মাল্টা তা কিন্তু এখনকার তথ্যমতে ভিত্তিহীন।। জাম্বুরা এবং কমলা র সংকরায়ন এর ফলে বারি মাল্টা ১ উদ্ভাবন হয়েছে যা আমাদের দেশের ও বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে মাল্টা এবং তা সুমিষ্ট। সাইট্রাস জাতীয় এক ধরণের ফল হলো।মাল্টা। বাংলাদেশে মাল্টার এত চাহিদা যে বিশ্বে মোট মাল্টা আমদানীকৃত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম এবং আমাদের দেশে বিদেশী ফলের মাঝে সবথেকে বেশি আমদানি হয় আপেল এবং এর পর ই রয়েছে মাল্টার অবস্থান। গত অর্থবছরে মাল্টা আমদানী হয়েছে ১৯ কোটি ৯১ লাখ কেজি মাল্টা।।এই তথ্য থেকেই আন্দাজ করা যায় মাল্টার চাহিদা কি পরিমান আমাদের দেশে। এই ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ফলটির অভিযোজন ক্ষমতা কমলা র থেকে ও বেশি তাই এটি এখন সহজে ই চাষ করা হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
অপেক্ষাকৃত উঁচু মাটি যেখানে পানি জমেনা এমন জায়গা মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। এবং এসব বিবেচণায় টাংগাইল এর ঘাটাইল এর মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী বিবেচিত হয়েছে এবং এখানে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টার চাষ এবং শুধু তাই নয় পাওয়া যাচ্ছে মাল্টার বাম্পার ফলন ও। ঘাটাইল জেলার উত্তর সীমান্তে রসুলপুর গ্রামে মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় শামসুল আলম নামক একজন ব্যক্তি কে দিয়ে, যিনি ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষক। তার হাত ধরে সেই কয়েক বছর আগে ই শুরু হয় ৭ একর জমিতে মালটা ফলের বাগান, কিন্তু এখন আর তা এটুকুতে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পরেছে অনেক গ্রামে। এখন ঘাটাইল সদর উপজেলাসহ, শালিয়াবহ, মধুপুর এর বেতবাড়ি গ্রাম সহ সখীপুরের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে মাল্টার।
২ হেক্টর এর বেশি জায়গা জুড়ে শুধু মাল্টার চাষ হচ্ছে। চারা গাছ লাগানোর পর থেকে ৩ বছর এর মত সময় লাগে। অনেক সময় ২য় বছরেই ফল আসে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক গাছ হওয়ার আগের ফল পরিপক্ক না করা ই ভালো গাছের জন্য এবং পরিবর্তী ফলন এর জন্য৷ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি তে ফুল আসলে সেই ফুল থেকে ফল পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৭-৮ মাস। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে ৩০০ টি র কাছাকাছি বা বেশি মাল্টা ধরে৷
বিভিন্ন ধরণের বিদেশী ফলের ভীড়ে ক্রেতারা এখন অনেক বেশি সচেতনতায় ঝুকছেন দেশীয় ফলের প্রতি। স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে আমাদের দেশি ফলের সাথে বিদেশী ফলের তুলনা হয়না। তাছাড়া মাল্টা সব সময় ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । আর তা যদি হয় দেশের মাটিতে কেমিক্যাল ফ্রি তাহলে অবশ্যই এর সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশিই তাই না।
আসুন জেনে নেয়া যাক মাল্টার কিছু গুনাগুনঃ মাল্টাতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, চর্বিমুক্ত ক্যালরি, যা আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি পুষ্টির জোগান দেয়। এক গ্লাস মাল্টার জুস ভিটামিন সি এর এত ভালো উৎস যে তা ভিটামিন সি ট্যাবলেট এর বিকল্প পুষ্টির জোগান দিতে পারে। মাল্টা পাকস্থলী কে পরিষ্কার রাখে যার ফলে আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। মাল্টায় আছে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়, দাঁত গঠনে সহায়তা করে। মাল্টায় অবস্থিত ভিটামিন সি আমাদের কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মাল্টায় দ্রুত হজমে সহায়তা করে এবং জন্ডিস এর জন্য খুব উপকারী। মাল্টায় উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সর্দি, জ্বর ভাব, ঠান্ডা, হাঁচি, কাশিতে খুব উপকারী ফল মাল্টা। গুরা থেকে বুরাঅর্থাৎ বাচ্চা থেকে বয়স্ক সব বয়সের লোকেদের পছন্দের ফল হলো মাল্টা। বাড়ির পাশে কিংবা বাড়ির উঠোনেও শুরু করতে পারেন এই মাল্টার চাষ।মাল্টা বিভিন্ন বাগান থেকে কালেক্ট করেও শুরু করতে পারেন অনলাইনে ব্যবসায়।
আনারস আহা নাম শুনেই যেন জিভে জল আসে টস টসআমি তো মনে করি এটি সব ফলের বস!
আনারসের রাজধানী বলা যায়া মধুপুর কে ,আনারসে মধুর স্বাদ লেগে থাকে মুখে মুখে
দক্ষিণ আমেরিকায় এই গুচ্ছ ফল আনারসের আদি জন্মস্থান। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও কোস্টারিকা, ব্রাজিল এবং ফিলিপাইন এই তিনটি দেশ একত্রে বিশ্বের সমগ্র আনারস উৎপাদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন করে থাকে। ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে আনারসের উৎপাদন ছিলো ২৭৯ লক্ষ টন। সবথেকে বেশি উৎপাদন করেছিলো কোস্টারিকা। এরপর বৃহত্তর উৎপাদক হিসেবে যথাক্রমে ফিলিপাইন, ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড।
টাংগাইলের মধুপুরের মাটি বেলে দো-আশ এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পানি জমে থাকে না, যার ফলে এটি আনারস চাষের উপযোগী। মধুপুরের অধিকাংশ এলাকা জুড়েই হয় আনারসের চাষ। শ্রাবণের শেষ অবধি যেনো বাতাসে উড়ে বেড়ায় পাকা আনারসের ঘ্রাণ। এই মিষ্টি ঘ্রাণের কারণে বন্য প্রাণী ও পাখির যেনো ঈদ চলে পুরো মৌসুম জুড়ে। প্রতি বাড়িতে চলে আনারসের আচার বানানোর আনন্দ । সেই সাথে মধুপুরের জলছত্র বাজারে বসে সবথেকে বড় বাজার। যেখানে উপজেলার অরণখোলা, আউশনাড়া, শোলাকুড়ি, পচিশ মাইল থেকে জলছত্র বাজারে আনারস আসে, জলছত্র বাজারকে বলা হয় আনারসের রাজধানী।
আনারসের হাট নিয়ে একটা প্রামাণ্য চিত্র ধারন করার প্ল্যান চলছে শিগ্রই ইউটিউবে দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।আওয়ার টাংগাইল ইউটিউব চ্যানেলে। ভরা মৌসুমে এখানে দেখা যায় চারদিকে আনারসের ছড়াছড়ি,কবির সেই লাইনের কথা মনে পড়ে যায় এখানটায় এলে,ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট এ তরী,আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি,সেরকম, ঠাই নাই ঠাই ছোট সাইকেল কিংবা ভ্যানগাড়ি জুড়ি ,মিষ্টিআনারসে যেন গিয়েছে ভরি
যেহেতু এখানে প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয় তাই এখানকার চাষিরা নতুন নতুন জাতের আনারস পরিক্ষামুলক ভাবেও চাষ করছেন।তারমধ্যে একটি জাত হচ্ছে জলডুগি আনারস। যা সাইজে একটু ছোট তবে অনেক মিষ্টি ও অন্য আনারসের থেকে কম সময়ে ফলন দেয়। এবছর মধুপুরে ছয় হাজার তিনশত আটা নব্বই হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৩৪ মেট্রিকটন আনারস। সংখ্যার দিক থেকে যা ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টিরও বেশি। মধুপুরে আনারস চাষির সংখ্যা হচ্ছে ১৩ হাজার ৭৫০ জন। এছাড়াও নিজ আঙ্গিনার আশেপাশের জমিতেও কম বেশি চাষ করছেন প্রায় সব পরিবারের মানুষই।
বর্তমানে চাষিরা নিজেদের খরচ কমাতে আনারসের ব্যাবহার করছে হরমোন। যার কারণে আনারসের আগের মধুর ঘ্রাণ টা কমে যাচ্ছে, সাথে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন আসল স্বাদটাও। চাষীরা জানান, আনারস গাছে ফল আসতে ১৫-১৬ মাস সময় নিয়ে নেয় যা পরিপক্ক হতে প্রায় ২১-২২ মাস সময়। এতোদিনে আমাদের অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। কাঠাল, আম,কলা,লিচু, জাম, পেপে সহ অনেক ফল যেখানে ১২ মাসেই প্রফিট এনে দিচ্ছে, সেখানে আনারস চাষের সময়টা একটু বেশিই হয়ে যায়।।তারপরেও যতটা আশা নিয়ে আমরা ২ বছর অপেক্ষা করি ন্যায্য মুল্য না পাওয়ায় অনেকেই আনারস চাষের আগ্রহ হারাচ্ছে, আবার কেউ কেউ নানা রকম ক্যামিকেল ও হরমোন দিয়ে পাকিয়ে অসময়ে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।
সরকার যদি আমাদের দিকে একটু মুখ তুলে তাকান এবং আমাদের কিছু সুযোগ সুবিধা করে দেব তাহলে আগের মতই অকৃত্রিম স্বাদের আনারস আমরা দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।
আনারস চাষে কিছু পরিবর্তন এনে বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- আনারস বিক্রি হাট নির্ভর না হয়ে ই কমার্সের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি করলে ভালো প্রফিট করা যেতে পারে। আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে এবং তা থেকে ভালো কিছু আশা করাই যায়। জুস ফ্যাক্টরি তৈরি করা যেতে পারে,যেহেতু কাচামালের প্রচুর আছে এখানে তাই একটা নয় কয়েক্টা জুস ফ্যাক্টরি এখানে করা যেতে পারে। জ্বালানিতেও বেশ ভুমিকা পালন করে আনারসের গাছ ও পাতা। আনারস বাগানে পেপে, আদা, হলুদ চাষ করে আয় ও উতপাদন বাড়ানো যেতে পারে। আনারসকে আবার ব্যবহার করা যায় সবজি হিসেবেও। যেমন কচি আনারসকে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায়। আনারসের আচার ও অনেক বেশি জনপ্রিয়।
আসুন যেনে নেই আনারসের কিছু উপকারিতাঃ আনারসের অনেক ঔষধি গুনাগুন ও রয়েছে। যেমন জ্বর এসেছে মানেই আনারস খেলে ভালো হবে এ কথা কিন্তু মানুষ এমনি এমনিই বলে না, উপকারী তো অবশ্যই। আনারসের জুস ওজন কমাতে সাহায্য করে কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করে। আনারসের ক্যালসিয়াম দাতেঁর সুরক্ষায় করে। মাড়ির যেকোন সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় – বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতি দিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এছাড়াও হজম শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে।
আপনি জানেন কি কফি এখন টাংগাইলেও উৎপাদিত হচ্ছে? কফির নাম এলেই মনের মধ্যে গুন গুন করে বেজে সেই গান,কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেইব্যাক্তিগত ভাবে আমি চায়ের চেয়ে কফি বেশি পছন্দ করি। এক সনয় ছিল যখন চা কফি শুধু বিশেষ কোন জায়গায় ব্যবহৃত হতো,যেমন অফিস,মিটিং, রেস্টুরেন্টে আড্ডা,বা কোন অনুষ্ঠান। আজকাল চা কফি ছাড়া যেন আমাদের জীবনই পানছে,ঘুম থেকে উঠে চা কফি না খেলে তো আজকাল অনেকের ঘুমই ছাড়েনা,আবার অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও এই চা কফি খেতে হয়।
এক গবেষণার প্রমান মিলে,বিশ্বের ২য় পানিয় হলো কফি,এটির ব্যাবহার অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকেই ছিল বাংলাদেশেও এখন এর চাহিদা প্রচুর পরিমানে। আমাদের দেশে এর প্রচলন খুব বেশিদিন হবে না। তারপরেও এতোটা জনপ্রিয় হয়েছে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে তা চিন্তার বাইরে। মূলত ইউরোপ,আমেরিকার দেশগুলোতে রয়েছে এর বেশ প্রচলন। তবে জানা যায় নবম শতকে ইথিওপিয়াতেই এর সূত্রপাত ঘটে। ফালদি নামক এক ছাগল পালকের মাধ্যমে। তিনি একসময় দেখেন যে তার ছাগলগুলো বেরিজাতীয় একপ্রকার গাছের ফল খেয়ে অদ্ভুত আচরণ করে এবং সারা রাত না ঘুমানোর একটি ইতিহাস গড়ে। এরপর ছাগল পালক এই বীজ নিয়ে একজন মুসল্লির কাছে যায় তিনি এটি পুড়িয়ে দেখেন যে এর গন্ধ আরো মাতোয়ারা করে দেয়। একসময় বীজগুলো গরমপানিতে সিদ্ধ করার ফলে দেখেন যে এটির যেমন সুঘ্রান তেমনি খেলেও শান্তি শান্তি একটি ভাব চলে আসে। সেই থেকে শুরু এর প্রচলন,আবিষ্কার হয় জনপ্রিয় পানিয় কফির। আঠারো উনিশ শতকের দিকে সবচেয়ে বেশি এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে কয়েকটি দেশে।এটি আমাদের দেশে এসেছে এটি প্বার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে।
পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানের কেউ একজন ভারত থেকে চারা নিয়ে এসে এখানে চাষাবাস শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন ফলন ভালো না হলেও পরবর্তীতে বেশ সাড়া ফেলে। আর এখান থেকেই এখন পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো ফলন হচ্ছে। কারণ এখানকার আবহাওয়া, মাটি ও জলবায়ু কফি চাষের জন্য দারুণ উপযোগী। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও নীলফামারিতেও এর ভালো ফলন দেখা গিয়েছে।
সিলেটের এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সানোয়ার হোসেন নামের এক ব্যাক্তি যিনি প্রচুর চা/ কফি খাওয়া পছন্দ করতেন,যেহতু তিনি কফি খেতে বেশ পছন্দ করতেন তা,থেকে আগ্রহী হোন এই কফির প্রতি। তিনি সেখানকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০০ টি চারা কিনে নিয়ে আসেন তার নিজ এলাকায় টাংগাইলের মধুপুরে। শুরু করে দেন তার বাবার জমিতে এই চারাগুলো লাগানো। চারা লাগানোর প্রায় তিন বছরের মাথায় তিনি ভালো ফলন পান। এটা দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি আরও একটি জমিতে এই কফির চারা লাগান এবং এখানেও তার প্রায় অনেক চারা আছে। যেখানে নিয়মিত পরিচর্যা করছেন। তবে প্রথম বছরেই প্রায় (৭০-৮০) কেজি কফি উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।
কফি চাষ তো হলো ঠিকই কিন্তুু প্রসেসিং এ যত ঝামেলা। আর তাইতো তিনি স্থানীয় কৃষি বিভাগে সহায়তা চান। প্রথম দিকে তিনি যাঁতা কলেই ভাঙ্গিয়ে কফি বাজারে বিক্রি করেন। পরে অবশ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে এগিয়ে এসে তাকে সহায়তা করেন এবং তার কফি চাষের প্রতি আগ্রহ দেখে আরো উৎসাহিত করেন। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেন টাংগাইলের মধুপুর ও সখিপুরের মাটি কফি ও কাজু বাদাম চাষে বেশ উপযোগী। আগ্রহীরে এদিকে এগিয়ে আসলে তাদের চাষের জন্যে জমি, চারা ও প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। যাতে করে এদিকটা এগিয়ে যেতে পারে অনেকটাই।
কারণ আমাদের দেশে কফির এতো চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। প্রায় ৯৫% কফিই আমদানি নির্ভর। দেশে উৎপাদিত হয় তার বেশিরভাগই উৎপাদন হচ্ছে পার্বত্য জেলাগুলোতে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আমাদের দেশের আমদানিকৃত কফির পরিমাণ ৩২.৫৬৭ টন। এবং উৎপাদিত হয়েছে এদেশে মাত্র ৫৫ হাজার কেজি। বোঝাই যাচ্ছে কৃষি অর্থনীতিতে কতটা সম্ভাবনাময় এটি। এদিক থেকে এখানে কাজ করলে আমাদের দেশের বেকার সমস্যা অনেকটাই নির্মুল হবে।
যাই হোক,কফির রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রজাতি। এর মধ্যে বেশি চাষ হয় আফ্রিকাজাত কফিয়া বা রোবাস্তা কফি। এবং আর একটি জাত হলো কফি এরাবিকা। তবে রোবাস্তার ফলন বেশি হলেও স্বাদ হয় এরাবিকা। তাই চাহিদাও অনেকটা বেশি। আমাদের দেশে দুটি জাতই উৎপাদিত হচ্ছে। কফি চাষের জন্য পাহাড়ি অঞ্চল, যেখানে পানি জমবে না এমনকি সেচেরও দরকার হবে না এমন জমিই উপযোগী। তবে মাটি ঝুরঝুরে রাখতে হবে, কিছুটা ছায়া এবং কিছুটা রৌদ্রজ্বল পরিবেশও দরকার। এছাড়া মাটি হতে হবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ। তবে কিছুটা রোগবালাই দেখা দিতে পারে। কিন্তুু তা খুব বেশি নয়। আর এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে। তারা কফি চাষের বিষয়েই একটি প্রজেক্ট গ্রহণ করেছেন যেখানে চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে, রোপন, মাটি প্রস্তুুত,জমি দেয়া, চারা দিয়ে ও প্রশিক্ষণ দিয়েও সহায়তা করছেন এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরণের উদ্যোক্তাদের। তাছাড়া আমাদের দেশে অনেক হার্টিকালচার রয়েছে যেখানে চারা উৎপাদন করতে পারে। এখানেও আগ্রহীদের সহায়তা দিতে উৎসাহিত করেছেন। কফির চারা উৎপাদন করতে ৬ মাস সময় লাগে।
কফি গাছ জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসেই ফল সংগ্রহ করা যায়। বিঘাপ্রতি ৪০০-৫০০ টি চারা লাগানো যায় এবং কেজিপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা করে বিক্রি হয়। কফি গাছ প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। যদিও তিন বছর পর থেকে ভালো ফলন হয় কিন্তুু ৬-৭ বছরে পরিপক্কতা আসে। তবে মজার কথা হচ্ছে কফির বাগানে পাশাপাশি অন্যজাতের ফলও করা যায়। যা থেকেও অনেক আয় হয়। মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের সানোয়ার হোসেনও তাই করছেন এবং তাকে দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে এদিকে অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
কফির রয়েছে নানা গুণ। তবে মাত্রাতিরক্ত সেবনে হতে পারে বিপত্তি। তাই এদিকে নজর রেখে তা সেবন করতে হবে। ক্যাফেইনযুক্ত কফি সেবনে খেলাধুলায় প্রাণ পাওয়া যায়। যদিও হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ায় তবুও কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়। তাই যেকোন খেলার আগে কফি পান করলে শরীরে আলাদা শক্তি পাওয়া যায়। কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এমনকি মানসিক চাপের সময় ২০০ মি.গ্রা ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
এতো এতো চাহিদাসম্পন্ন একটি অর্থকরী ফসল এবং আমাদের দেশের আবহাওয়া যেখানে এতোটাই উপযোগী। আর এদিকে তো সহায়তা রয়েছেই বিভিন্ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তাহলে এদিকটাই আগ্রহীরা এগিয়ে আসলে একদিকে যেমন নিজেদের চাহিদা মেটানো যাবে তেমনি রপ্তানি করে বৈদশিক আয়ও হবে। আর সেজন্য তো রয়েছেই ই- কমার্স সেক্টর। তাই যত উৎপাদনের খাত হবে ততই সম্ভাবনা বাড়বে বলে আশা করছি ই- কমার্স সেক্টরের মাধ্যমে। যারা কফি চাষ করতে চান তাদের জন্য পরামর্শ হলো,নিকতস্থ কৃষি সম্প্রসারন অফিসে যোগাযোগ করুন।।
মধু নাম শুনলেই ছোট বেলার এই কবিতার লাইন গুলো মাথায় আসবেই মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচিদাঁড়াও না একবার ভাইঐ ফুল ফোঁটে বনে, যাই মধু আহরনেদাঁড়াবার সময় তো নাই
মৌমাছি মধু আহরণ করে ফুল থেকে, সেই মধু চাক থেকে সংগ্রহ করে মৌয়ালরা সেগুলো পরিস্কার করে আমরা খাই। মৌমাছি যেমন অনেক ফুল থেকে মধু আহরণ করে থাকে। আমাদের একটা ভুল ধারনা আছে তা হলো অনেকেই ভাবি যে ফুল মানেই বাগানের গোলাপ গাধা,শিওলি অমুক তুমুক ফুল,এসব ফুল যখন না থাকে তখনো কিন্তু মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে,কিভাবে? আমাদের আশেপাশের প্রায় সব গাছেরই ফুল হয়ে থাকে তো মাছিরা সেসব ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকে।
মৌমাছির অনেক প্রকার জাত রয়েছে,আমরা সাধারণত দুই জাতের মাছি বেশি দেখে থাকি,একটা হলো বুনোমৌমাছি আরেকটা বুনো হলেও তাদের বস করে পালন করা যায়।একটা একটু বড় আকারের হয় অন্যটা ছোট আকারের,একটা গাছের ডালে বাসা করে আরেকটা, মাটির গর্ত,মাচার নিচে, অথবা বাড়ির আনাচে কানাচে যেখানে মানুষের চলাচল একটু কম।
আকারে ছোট মাছি গুলো বাক্সে ভরে পালন করা যায়,আর এই বাক্স গুলোকে যখন সরিষা ক্ষেতের ভিতরে রাখা হয়, সে মাছি গুলো শুধু সরিষা ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে তখন তার নাম হয়ে যায় সরিষা ফুলের মধু। আবার একই মাছিকে যদি সূর্য্যমুখির বাগানে নিয়ে যাওয়া হয় তারা শুধু সূর্য্যমুখির মধু সংগ্রহ করবে তখন তার নাম সূর্য্যমুখি ফুলের মধু।
এভাবে এই মাছিগুলোকে যখন যে বাগানে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেইসব ফুলের মধু কালেক্ট করে দেয়।
অন্য দিকে বড় মাছি গুলো আপনি চাইলে তাড়িয়ে দিতে পারবেন কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও কোথাও বসাতে পারবেন না এটা সম্পুর্ণ তাদের ইচ্ছেতে।ছোট মাছি গুলোর রানি কে সরিয়ে নিলে তারা আপনার পিছু পিছু আসবে কিন্তু এই বড় মাছি গুলো তাও আসেনা। এজন্যই প্রাকৃতিক চাকের মধু খুবই কম পাওয়া যায়,তবে আমাদের টাংগাইলে এসব চাক প্রচুর পরিমানে আছে,তারপরো আমরা প্রাকৃতিক মধু পাইনা কারন কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী আসল নকল মিক্স করে চড়া দামে মুনাফা অর্জন করে থাকে।
আমি নিজেও এসব সম্পর্কে তেমন জানতাম না যদি না নিজে এসবের পিছনে ঘুরতাম,আমার উদ্যোগে প্রাকৃতিক মধু সেল করি তাই অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে।
এক মৌয়ালের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি স্বিকার করে বলেন ভাইজান আমরা ন্যায্য দাম না পাইয়া এসব ভেজাল করি,সবাই চায় ভালো পন্য কিন্তু দাম দিতে চায় কম আমাদের কি দোষ কইন?. আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি,আপনার কাছে কোন উত্তর আছে? পরে আমি সেই মৌয়াল কে আমার নাম্বার দিয়ে দিয়েছি যখনি কোন চাক পায় আমাকে কল দেয় আমি দাড়িয়ে থেকে চড়া দামে তার থেকে মধু সংগ্রহ করি।
চড়া দাম মানেই যে সেরা তাও কিন্তু নয়,তাই চড়া দাম যেমন দিব তেমনি চড়া মানের মধুটাও নিশ্চিত হয়েই নিব।। যাই হোক কাজের কথা হলো যেহেতু আমাদের টাংগাইলে প্রচুর প্রাকৃতিক চাক,এবং প্রচুর সরিষা ও অন্যান্য ফুলের চাষ হয়,তাই এখানে আমরা চাইলে প্রাকৃতিক অথবা চাষের মধু নিয়ে কিন্তু নিজেদের উদ্যোগ শুরু করতে পারি,বাজারে কিন্তু যথেষ্ট মধুর চাহিদা রয়েছে জাস্ট প্রমান করতে হবে আপনার টা সেরা মানেত কিনা।
এবার আসুন জেনে নেই মধুর উপকারীতা,কেন এটাকে সকল রোগের ঔষধ বলা হয়? মধু স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। মধু হজমে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। সর্দি, কাঁশিতে খুবই কার্যকর। পুরনো আমাশয়, পেটের পীড়া সহ নানা রোগের উপশম করে। ত্বকের যত্নে মধু খুব কার্যকরী। হৃদরোগ এ মধুর ব্যাপক কার্যক্ষমতা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মধু নিয়মিত খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ঠিক থাকে এবং রক্ত স্বল্পতায় খুব দ্রুত কাজ করে । আলসার ও গ্যাস্ট্রিক এর জন্য উপকারি।। বাতের ব্যাথা সারাতেও বেশ কাজ করে শরীরের দূর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে৷ আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা জানি তাই বললাম এগুলো ছাড়াও শত রোগের ঔষধ হিসেবে মধু অতুলনীয়। মধুতে অনেক উপকরণ এর মধ্যে প্রধান হলো সুগার। আমরা কিন্তু সুগার সব সময় এড়িয়ে চললে ও মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রক্টোজ দুটি সরাসরি মেটাবোলাইজড হয়ে যায় যা ফ্যাট হিসেবে জমা হয়না। মধুতে অনেক ধরনের ভিটামিন, আয়রন, প্রোটিন , হরমোন, এসিটাইল কোলিন, বোরন, ক্রমিয়াম, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড সহ আছে অনেক অনেক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য যেমন পুষ্টিকর তেমনি শক্তিবর্ধক এবং বিভিন্ন রোগের উপশমে উপকারি।
হাসান সরকার ছালেহীন। অকৃত্রিমঃ সকল প্রকার অর্গানিক পন্যের নির্ভরযোগ্য অনলাইন সেবা মুলক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের মৃৎশিল্প সভ্যতার শুরু থেকেই এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।সভ্য জাতি হওয়ার চিন্তা থেকেই মানুষের সমাজবদ্ধ জীবন যাপন।প্রাচীন কালে মানুষ বনের পশু পাখি আগুনে পুরিয়ে খেলেও আস্তে আস্তে এটার পরিবর্তন হতে থাকে। মানুষ রান্না করা শিখে আর সেই রান্নার তাগিদ থেকেই তারা হাঁড়ি পাতিলের অভাব অনুভব করে।তখনও তাদের মধ্যে কাসা পিতল সীসা ব্যবহার করে হাড়ি পাতিল তৈরী করার মতো পরিবর্তন আসে নি। আর তখন তারা মাটি দিয়ে পাতিল তৈরী করে আগুন ব্যবহার করে রান্নার চিন্তা করে।ধীরে ধীরে সব কাজে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয়। এভাবেই মৃৎশিল্পে প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে নানা রকম খেলনা ও শো পিস তৈরী করে যা ঘর সাজাতে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ যারা মৃৎশিল্প নিয়ে কাজ করে তাদের কুমাড় বলা হয়।সনাতন ধর্মের লোকের মধ্যে পালেরা মূলত মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। টাংগাইল জেলার বেশ কিছু উপজেলায় এখনো কিছু এলাকা জুরে মৃৎশিল্পের কাজ হয়ে থাকে।তারমধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ৯৯ টি পরিবার,নাগরপুর উপজেলায় ১০৭ টি, বাসাইলে ১১৫ টি, ঘাটাইলে ৬০ টি,ভূঞাপুরে ২২০ টি, গোপালপুরে ১১২,কালিহাতিতে ২৮০ টি, ধনবাড়িতে ১০ টি এবল মধুপুরে ৯ টি, এবং টাংগাইল সদর উপজেলায় ১৫৮টি কুমাড় পরিবার বসবাস করছে।১ হাজারের বেশি পরিবার এখনো এই কাজের সাথে জড়িত। বাসাইল উপজেলায় মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক পরিবার কাজ করে তার মধ্যে একটি পাড়া বাসাইল পৌড়সভার খুব কাছেই তার নাম কুমাড়পাড়া।
বাসাইলে আরো একটি কুমাড়পাড়া আছে রাশরা তে যেখানে এখনো সব রকম প্রতিবন্ধকতা ভুলে তৈরী হচ্ছে মৃৎশিল্পের বাহারী রকমের জিনিস। আজ ঘুরে এলাম টাংগাইল জেলার মৃৎশিল্প এলাকা থেকে। টাংগাইলে মৃৎশিল্প এলাকার মধ্যে কালিহাতি উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের বল্লার পাল পাড়াতে ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার এখনো টুকিটাকি মৃৎশিল্পের কাজ করে যাচ্ছে।কিন্তু বর্তমানে কেউ ই এই পেশার আয় থেকেই জীবিকা নির্ভর করছে না, বলা চলে করতে পারছে না।তাদের বাপ দাদার কাজ ছেড়ে তাদের করতে হচ্ছে অন্য কাজ। পালপাড়ার খিতিশপালের স্ত্রী (৮০-৯০বছর)কে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তার জন্মের আগে থেকে এমন কি তার বাপ দাদার আগে থেকেই তার পূর্বপুরুষরা এই পেশার সাথে জড়িত।খিতিশপালের বাবা সূর্যকান্তপাল এবং দাদা যাদবপাল এই পেশার সাথেই জড়িত ছিলো।জানা যায় তাদের আরও পূর্ব পুরুষেরাও নাকি এই পেশার সাথে জড়িত ছিলো।তাই তারা এই কাজ কবে শুরু করে এবং তাদের পূর্ব পুরুষেরা কত সাল নাগাত এই বল্লাতে বসতি স্থাপন করে জানতে চাইলে তারা সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি।কেবল বলেছে তাদের পূর্ব পুরুষের জন্মও এই বল্লার মাটিতেই।তাদের এই পেশা কবে থেকে শুরু হয় জানতে চাইলেও সেই একই উত্তর পাওয়া যায়। তার পূর্ব পুরুষেরা এই পেশার সাথেই জড়িত ছিলো।যা বৃটিশ আমলকেও ছাড়িয়ে যায়।২০০ ২৫০ বছরেরও আগে এই পেশার সাথে জড়িত বলতে গেলে সভ্যতার শুরু থেকে যখন এই পেশা শুরু হয় তখন তাদের পূর্ব পুরুষেরা এই কাজের সাথে জড়িত হয় এবং বংশ পরম্পরায় তারা তাদের এই কাজটিকে ধরে রেখেছে।যদিও আগের মতো আয় বা চাহিদা নেই তাদের জিনিসের।তবু পারিবারিক ভাবেই কিছু কিছু পণ্য তৈরী করছে তারা।
বাড়ির মহিলাদের আয়ের উৎস এই মৃৎশিল্প। সারাদিন বাড়িতে বসে এই কাজ গুলোই করেন তারা।তাছাড়া বাড়ির ছোট বাচ্চারাও কাজে হাত লাগায় ছোটবেলা থেকেই। ৪ বিঘা জায়গা জুরে পাল পাড়ায় প্রতিটি ঘরের মানুষ এই কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু তাদের সমস্যা হয়েছে এক জায়গাতে,,বর্তমানে তাদের পণ্যের চাহিদা কম।স্থানীয় ভাবে কিছু চাহিদা থাকলেও বাইরে চাহিদা না থাকায় তাদের কাজের পরিমান সীমিত। গ্রামে এখনো কুয়ো করা হয় তাই এইসব কাজে তাদের একটু চাহিদা রয়েছে।বল্লাতে দই খুব জনপ্রিয় হওয়াতে আর বাইরেও দইয়ের চাহিদা থাকার কারনে প্রচুর দই তৈরী হয় প্রতিদিন।দই পাতার হাড়ির চাহিদা তাই এখনো কমে যায় নি।এই দুইটি জিনিসের চাহিদা আছে বলেই কিছু কুমাড় কোন রকম খেয়ে পরে জীবন যাপন করতে পারছে। তাছাড়া মাটির হাড়ি,কলসি,ঠিলা,সরা,সানকি, মুড়ি ভাজার হাড়ি,জান্জর ইত্যাদি তৈরী হয় সীমিত চাহিদা মিটানোর জন্য।তাছাড়া বছরের ঈদ পুজা বার্বণ, বৈশাখী মেলাতে মাটির খেলনা তৈরী করা হয় বিক্রির জন্য যদিও চাহিদা খুব বেশি নয়।ইলেকট্রনিক যন্ত্র কেড়ে নিয়েছে বাচ্চাদের জীবন থেকে এইসব মাটির খেলনা গুলো।মাটির তৈরী ব্যাংক ছিলো আগের মানুষের সঞ্চয়ের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল একাউন্ট হওয়াতে ব্যাংক শুধু মাত্র শখের জিনিস এখন। অতীতে তাদের মাটির জিনিস বিক্রি করে টাকার পরিমান কম হলেও বিক্রির পরিমান বেশি ছিলো।
মুদ্রার স্ফীতির জন্য তাদের আয় বেশি দেখালেও তা জীবন ধারনের জন্য অতি সামান্য। বৃদ্ধ মহিলাটি তার কথায় সেরকম কিছুই বুঝাতে চেয়েছিলেন। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই মৃৎশিল্প। কিন্তু মাটির জিনিসের ব্যবহার আমাদের শরীর এবং মনের জন্য উপকারী। যদিও এই বিষয় নিয়ে মানুষের তেমন ধারনা নেই। বর্তমানে ই কমার্সে মাটির জিনিস অন্তর্ভুক্ত হলেও তা সব এলাকার কুমাড় সম্প্রদায়ের কাছে পৌছাইনি।এলাকা ভিত্তিক ই কমার্স উদ্যোক্তারা যদি এই সকল কুমাড় সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে কাজ করে তাহলে এই সম্প্রদায়ের লোকেদের নিজেদের শিল্পকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব হবে এবং তার সাথে মানুষকেও মৃৎশিল্পের উপকারিতা সম্পর্কে জানানো সম্ভব হবে।তাতে হয়তো আবার এই শিল্পের চাহিদা বাড়বে এবং বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। ই কমার্সের ছোয়া লাগলে মৃতপ্রায় মৃৎশিল্প হয়ে উঠতে পারে পুনরুজ্জীবিত। বর্তমানে মানুষ খুবই সৌখিন। সৌখিনতার জন্যও মানুষ মাটির তৈরী জিনিস জায়গা দিতে পারে নিজেদের ড্রয়িং রুমে।কিন্তু নদীভরাট ও নদীর নব্যতা কমে যাওয়া মৃৎশিল্পের অন্যতম প্রধান সমস্যা।চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল এখন আর পাওয়া যায় না। তাছাড়া জায়গার এভাবেও বর্তমানে এই শিল্পের তেমন প্রসার হচ্ছে না।কিন্তু এখনো এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ই কমার্স ও দেশি পণ্যের প্লাটফর্ম women and e Commerce forum(we) এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
একজন কুমোড়ের হাতের ছোয়ায় একদলা মাটি দিয়ে তারা চাহিদা অনুযায়ী যেকোন আকৃতি করে দিতে সম্ভব। তাদের এই প্রতিভাকে বাচিয়ে রাখতে ই কমার্সের গুরুত্ব অনেক।বর্তমানে ই কমার্স ই পারে মৃতপ্রায় দেশি শিল্প গুলো বাচিয়ে রাখতে।টাংগাইলের এই মৃৎশিল্প কে বাঁচিয়ে রাখতে টাংগাইলের ই কমার্স উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে এই শিল্প কে আরো দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। কালিহাতির বল্লা ছাড়াও রতনগঞ্জ,ঘোনাবাড়ি,হামিদপুরের বেতডোবা,নাগবাড়ি ইউনিয়নের কুমোড়িয়া পাড়াসহ, ধানগড়াতে বেশ কিছু গ্রামে এখনও কিছু পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।টাংগাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে কালিহাতি তে সবচেয়ে বেশি কুমাড় পরিবার রয়েছে। আর এইসব পরিবারকে যদি সরকারি ভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা যায় এবং ই কমার্স উদ্যোক্তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এই শিল্পকে আবার চাহিদা সম্পন্ন করে তুলতে পারবো।বেঁচে যাবে দেশীয় ঐতিহ্য। শারমিন জিয়া টাংগাইল জেলা সহপ্রতিনিধি ( Women and e commerce Forum (we)
গৃহস্থালি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের লৌহজাত পন্যের জন্য বিখ্যাত ছিল আমাদের টাংগাইল জেলার, ঘাটাইল থানার পাকুটিয়া এলাকা। আপনারা জানেন কি? এক সময় সারা দেশে না শুধু সারা বিশ্বে হই চই ফেলে দিয়েছিল এই ঘাটাইল পাকুটিয়ার কামারেরা! পাওয়ার টিলার অর্থাৎ ট্রাক্টরের ফাল আবিষ্কার করে।বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও নানা রকম আবিস্কার হওয়ার কারনে এই শিল্পিরা আজ কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কর্মকারঃ এক শ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায় এরা এখন যদিও অনেক রকম কাজে জড়িত, আগে এরা, কেউ মাটির কাজ,কেউ লোহা,পিতল,কাসার কাজ করত। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন রকম পন্য,যেমন হাড়ি,পাতিল,কলসি,ফুলের টব,মাটির ব্যাংক সহ বাচ্চাদের খেলনা,পুতুল, ঘুটি ঘটি,ঘোড়া বাঘ,ও গরুর গাড়ি এগুলো বানানোর কাজ করেন তাদের কুমার বলা হয়।
যারা স্বর্নের কাজ তথা,নানা রকম অলংকার বানানোর কাজ করেন তাদের স্বর্নকার বলে।
যারা লোহার নানা রকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বানানোর কাজ করেন তাদের কামার বলা হয়। আজ বলব এই কামারদের কাজ বা শিল্প নিয়ে।
অতীতে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে এ দেশে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। প্রতলিত লোক কাহিনি মতে,শূদ্র মহিলার সাথে দেবশিল্পি বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কামারের জন্ম হয়। কামারদের মধ্যেও আবার কয়েকটি শ্রেনী রয়েছে,যেটা বিবাহ করার ক্ষেত্রে এখনো তারা সেই স্বশ্রেণী বেছে নেয়। বসুন্দরি,রানা,গঙ্গালিরি,এবং বাহাল। এই চার শ্রেণীর ও আবার বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণী আছে।
যাই হোক আমরা এত গভিরে যাচ্ছিনা,কামার দের তৈরি জিনিস পত্র গুলো দেখে নেই।
দা,বটি,ছুরি,কাস্তে,শাবল খুন্তি,কুড়াল,হাতুর,লাংগল,ট্রাক্টরের ফাল,শিকল,পেরেক,চাপাতি,কোদাল,লোহার কড়াই সহ যাবতিয় নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক রকম লোহার যন্ত্রপাতি।
পাকুটিয়া এলাকা ঘুরে জানা জায় এ এলাকায় প্রায় ২৫০ টি পরিবার এই লোহার কাজের সাথে জড়িত ছিল।কিন্তু প্রযুক্তিগত যন্ত্রের কাছে তাদের হস্ত শিল্প হার মেনে যাওয়ায়, এখন মাত্র ৪০-৫০টি পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত আছেন।বাকিরা একেক জন একেক পেশায় জড়িয়ে গেছেন। এর কারন জানতে চাইলে তারা এই মত প্রকাশ করেন যে,
আসলে এই কাজে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়,তাতেও আমাদের কোন সমস্যা নেই আমরা এই কাজ বাপ দাদার কাছে শিখেছি,করেছি,তখন এগুলোর অনেক টান ছিল,আমরা ন্যায্য মুজুরি বা পারিশ্রমিক পেতাম। বর্তমানে আমাদের বাইরেও অনেক জাতের মানুষ এই পেশায় জড়িয়ে, সস্তায় নিম্ন মানের জিনিস বানিয়ে কম দামে বিক্রি করায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সাধারণ মানুষ কোনটা ভালো মন্দ তা বিচার না করে কোনটা সস্তায় পাওয়া যায় তা কেনায় আমাদের ভালো মানের জিনিসের দাম ও অনেক কমে বিক্রি করতে বাধ্য হই।
তাছাড়া আমাদের সন্তানেরা সহ এই সমাজের চোখে এই পেশা নিম্নমানের ধরা হয়।এজন্য আমরাও কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তাদের পছন্দমত পেশায় যেতে দিচ্ছি। আমাদের অতীত ধরে বসে থাকলে তো আর চলবেনা,এখন এসবের তেমন দাম, নাম মান কোন কিছুই নেই তাই এটার প্রতি যে দরদ ভালবাসা ছিল তা দিন দিন কমেই যাচ্ছে,তারপরেও আমরা যারা একটু নিম্নবিত্তের তাদের অন্য কোন উপায় না থাকায় এই কাজ করেই জিবিকা নির্বাহ করছি।
সারদিন কাজ করে কত ইনকাম।হয় জানতে চাইলে তারা উত্তর দেন, সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫/৬ টা পর্যন্ত কাজ করলে আমাদের ৩৫০-৫০০ টাকা ইনকাম হয়। কিন্তু সমস্যা হলো মাসের প্রতিদিন আমরা একই রকম কাজ পাইনা,দেখাযায় কোন মাসে ১০/১৫ দিন ও বসে থাকতে হয়।
পাকুটিয়ার সবচেয়ে নামকরা কামারের বংশধর অতুল কর্মকার কে এই শিল্পের ধ্বংসের কারন জানতে চাইলে তিনি একই রকম মত ব্যাক্ত করেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে,ছেলে অন্য পেশায় আছেন,তিনি এখনো তার পেশা একাই কোন রকমে ধরে রেখেছেন।তিনি আরও বলেন,আসলে এই কাজ একা করা সম্ভব নয় মিনিমাম দুইজন লাগে এই কাজ করতে,একটা কারিগর রাখলে তার বেতন দেয়া লাগে ৫০০/৬০০ টাকা তাও কাজ করে সকাল ৮-থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।দুই জনে কাজ করলে মোটামুটি ১০০০/১৫০০ টাকার কাজ করা যায়,কিন্তু সব সময় লোক পাওয়া যায়না,আবার লোক পেলে তেমন কাজ পাওয়া যায়না।তাই আমি নিজেই টুকটাক যা পারি করি।
অতুল কর্মকারের নাতির সাথে কথা বলে তার কাছে জানতে চাই এ পেশা কি তিনি ধরে রাখবেন কিনা?
তিনি উত্তরে বলেন, আসলে আমার দাদু এই কাজ করে এটাই আমরা চাইনা,দেখতেও ভালো দেখায় না,আমার বন্ধুবান্ধবের বাপ চাচারা চাকরি বাকরি করে,আর আমরা এসব করি বললে সমাজ ও নিচু চোখে দেখে,তাই এটাতে আগ্রহ নেই।
নাতি শিক্ষিত হওয়ায় তাকে জিগ্যেস করি ই-কমার্সে আসলে এই শিল্প নিয়ে কিছু করা যায় কিনা?
তিনি বলেন,আসলে বর্তমান যুগে আবার খাঁটি পন্যের টান বাড়ায় এটা হয়ত সম্ভব,কিন্তু তার জন্য বেশ পুজি লাগবে,উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যাবহার ও ৪/৫ জন লোক নিয়ে কাজ করালে ভালো একটা প্রডাকশন বের করা সম্ভব। এই পুঁজিটা আমায় কে দেবে বলেন?
অবশেষে আমরা যা বুঝতে পারলাম তা হলোঃ দেশ ডিজিটাল হয়েছে হয়ত কিন্তু আমাদের সমাজ,সমাজের মানুষের চিন্তাভাবনা ডিজিটাল না হওয়ায়, এবং কোন সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে,ভাল মন্দের তফাত গুলো আমাদের বুঝতে হবে,কোন কাজই ছোট নয়,এই বিষয় গুলো তাদের বুঝাতে হবে,বিভিন্ন ভাবে তাদের ক্ষুদ্র ঋৃনের ব্যাবস্থা করতে হবে। তাহলে হয়ত এই ঐতিহ্যবাহি পেশা বা শিল্পকে উদ্ধার করা যেতে পারে।।
আমি সাদিকুন নাহার শান্তা। সম্মান তৃতীয় বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে কুমুদিনী সরকারি কলেজ, টাংগাইলে অধ্যায়নয়ত আছি। বরাবরই কাজ করতে ভালো লাগে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক হাতের কাজ করতাম। বড় হয়ে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। শুধু মেয়ে আর বউ হয়ে থাকার বাহিরেও আমার নিজেস্ব একটা পরিচয় যেন আমার থাকতেই হবে। এরকম অদম্য জেদ আর প্রবল ইচ্ছে শক্তির জোরে নিজের স্বপ্ন থেকে কখনো পিছুপা হইনি। গ্রামে বড় হওয়ার সুবাদে প্রাইমারী স্কুল পার হতে না হতেই গ্রামের নীতি অনুযায়ী বিয়ের প্রপোজাল আসতে শুরু করে বাবা মা বিরক্ত হয়ে একটা সময় বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু ওই যে আমার স্বপ্ন, আমার ইচ্ছে আমাকে আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ভালো ছাত্রী হওয়ার সুবাদে স্যার, ম্যামদের চোখের মনি হয়ে ছিলাম। আমাকে সব সময় ওনারা সাপোর্ট করতো। এভাবে স্কুল কলেজ পার করে ভার্সিটি লাইফ চলে আসলো। বিভিন্ন পাবলিক ভার্সিটি তে এডমিশন টেস্ট দিলাম কোথাও ওয়েটিং কোথাও বা লিস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন। মন ভেঙ্গে গেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে সাত কলেজে এডমিশন টেস্টে পজিশন ভালো আসলো। ভর্তিও হয়ে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু একা একা ঢাকা তে থাকা সম্ভব মনে হলো না বলে ন্যাশনালে চলে আসলাম। টাংগাইল আসার পর থেকেও কিছু না কিছু করে যাচ্ছি। টিউশনি করতে পছন্দ করতাম কারন পড়তে আর পড়াতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। গত বছর করোনা কালিন সময়ে লকডাউন ঘোষণা করা হলো চলে গেলাম গ্রামের বাড়ি। বাড়িতে গিয়েও স্টুডেন্ট পড়াতে হলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টুডেন্ট পড়াতাম। ফেইসবুক নিউজফিড ঘুরতে ঘুরতে চোখ আটকে যায় Women and E-commerce Forum WE নামক গ্রুপে। তখন গ্রুপ সম্পর্কে, বিজনেস সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিল না। গ্রুপের পোস্ট গুলো পড়তে লাগলাম, কয়েকদিন নিয়মিত গ্রুপ কে সময় দিলাম। আমি আমার করনীয় খুজে পেলাম। মাথায় বিজনেসটা ডুকে গেলো। টিউশনির টাকা থেকে অল্প কিছু টাকা নিয়ে কাপড় কিনে নকশিকাঁথা তৈরি করলাম। ২০২০ সালের অগাস্ট মাসের ৭ তারিখে উই তে জয়েন করি। সেপ্টেম্বর মাসে এসে আমার প্রথম সেল হয় ৯০০ টাকা। আমার কাজ দেখে গ্রামের অনেক মেয়েরা কাজ করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। ইন শা আল্লাহ, তাদের সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন দেখি। ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামে থেকেই সেল হয় ৮,৬০০ টাকা। লকডাউন শিথিল হলে জানুয়ারী মাসে টাংগাইল শহরে চলে আসি। প্রথম মাসেই সেল হয় ৬,৯০০ টাকা। আস্তে আস্তে সেল বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত মোট সেল হয়েছে ১০২,৯০০ টাকা। আলহামদুলিল্লাহ উই এর হাত ধরে লাখ টাকার সেল করে লাখপতি হয়ে গেলাম। পেইজ চরকা, আমার পণ্য গুলো হলো সকল প্রকার টাংগাইল শাড়ী সহ নানা ধরনের শাড়ী, বিভিন্ন ধরনের থ্রি পিস, কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি পাঞ্জাবী, বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবী, প্রাকৃতিক চাকের মধু, নকশিকাঁথা ( আমার সিগনেচার পণ্য), রাজশাহীর বিখ্যাত আম, আমসত্ত্ব বা ম্যাঙ্গুবার ( সিগনেচার পণ্য) , বোরকা,হিজাব,খিমার সেট, শাল (চাদর)। আমার স্বপ্ন গ্রাম এবং শহরের মেয়েরা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় ঘরে বসে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে পারে। আমি আমার পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য, আমার নিজের এলাকার জন্য কাজ করতে চাই। সবাই কে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
তোমরা যে বলো দিবস রজনী ভালবাসা ভালবাসাভালবাসা কারে কয়?সেকি কেবল নারী পুরুষেই হয়?ভালবাসা মানে এই না যে তাকে তোমার পেতেই হবে,ভালবাসা হলো তোমার নিঃশ্বাস, যার প্রতিটিতেই তার বসবাস! ( সবই আপনি পাবেন তাও নয়,তবুও চেষ্টা করলে অসাধ্য ও সাধন হয়)
ভালবাসা মানে এই না যে তুমি তার প্রতিদূর্বল,ভালবাসা হলো তোমার শক্তি, সে পাশে থাকলে যা বাড়ে!(কাজের প্রতি দুর্বল না হয়ে,কাজটা শেষ হলে কি হবে,কেমন হবে সেটা ভেবে কাজ করুন)
ভালবাসা মানে এই না যে তার দুঃখে তুমি কাঁদবে,ভালবাসা হলো তোমার প্রচেষ্টা, যার ফলে দুঃখ গুলি কখনো তাকে ছুঁতেই পারবে না!(হাজারো বাধায় চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে,হাল ছাড়া চলবে না)
ভালবাসা মানে এই না যে সে চলে গেলে তোমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে,ভালবাসা হলো সে সুখে আছে এই কথা ভেবে তোমার মুখের এক চিলতে হাসি!( উদ্দোগে ধরা খেলে,লস হলে শেষ করে দিবেন সব?)
ভালবাসা মানে এই না যে সম্পর্ক শেষে তাকে ঘৃণা করা,ভালবাসা হলো আরেকটা নতুন জীবন, তার আগমনে যার শুরু তোমার মৃত্যুতে যার শেষ!(কোন উদ্যোগে আপনার সব হারিয়ে গেলেও,আবার নতুন করে, ভুল গুলো শুধরে আবার শুরু করুন,ইনশাআল্লাহ এইবার জয় নিশ্চিত)
আচ্ছা বলেন তো ভালবাসা কি শুধু নারী পুরুষেই হয়?আমার মতে না,আমার প্রিয় বাইকটিও আমার ভালবাসা।যার যত্ন আমি নিয়মিত নেই,তার কিছু হলে আমারও কলিজায় লাগে।
আমার নিত্যদিনের সংগী ফোনটাও আমার ভালবাসা।হঠাৎ স্লো হয়ে গেলে বা হ্যাং হলেই কেমন ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।আমার ব্যাবহার করা ল্যাপটপ টাও আমার ভালবাসা,যার কিছু হলে অনেক কষ্ট হয়।
আমার ক্যামেরা টাও আমার ভালবাসা যার নিয়মিত যত্ন নিতে হিয়।যত্ন করে বাড়ির আংগীনায় লাগানো ফুল গাছটাও আমার ভালবাসা।প্রতিদিনের কাজটা যা দিয়ে আমি এবং আমার পরিবার চলে তাও আমার ভালবাসা।
যাদের জন্য দিনরাত খেটে রোজগার করি তারাও আমার ভালবাসা।যারা না খেয়ে বসে থাকে আমি ফিরলে এক সাথে খাবে বলে তারাও আমার ভালবাসা।
যে মানুষ গুলো থেকে শিখছি প্রতিনিয়ত তারাও আমার ভালবাসা। যারা আমার হাবি জাবি লেখা দেখেও উৎসাহিত করে যাচ্ছেন তারাও আমার ভালবাসা।এই মাত্র এই পোস্টটি আপনি যে মনযোগ ও সময় দিয়ে পড়ছেন আপনিও আমার ভালবাসা।
মাত্র স্ক্রল করে চলে যাওয়া লোকটিও আমার ভালবাসা।(তাকে ইম্প্রেস করতে আরও ভাল লেখার চেষ্টা করব।)আমাদের একজন প্রিয় স্যার ছিলেন,তিনি দেখতে অনেক সুদর্শন ও স্মার্ট ছিলেন।তিনি একজন কে বিয়ে করেন যিনি একটু নয় বেশ ময়লাই ছিলেন।স্যার বউ কে নিয়ে ফিরছিলেন পথে স্যারের এক চাচা তাকে ডেকে বললেন,কিরে মাঈন এই কালা ছাগলডা কুন থিকা ধইরা আনলি?(মস্করা করে কালো রঙ বোঝাতে ছাগল বলেছেন)(কালো মহিলাটা কোথা থেকে ধরে এনেছিস??)
মাঈন স্যার হেসে বললেন চাচা আমার চোখ টা যদি আপনার চোখে লাগাই দিতে পারতাম তাহলে বুঝতেন, সে কালো ছাগল নাকি জান্নাতি হুর।স্যারের মুখ থেকেই শুনা। তো কাজের কথা হলো,ভাল চোখে দেখলে দুনিয়ার সব কিছুতেই ভালবাসা পাবেন,ভালটাই দেখবেন।
আজ যাকে দেখে আপনার ভাল লাগছে না,ক্ষেত গাইয়া ভুত মনে হচ্ছে, তার সাথে একটু মিশলেই আবিস্কার করবেন সে তামা নাকি সোনা।দূর থেকে মানুষ কে যায়না চেনা।এই জন্যই বোধহয় অনেক শিল্পি গান গেয়েছেন,ভালবাসা ভাল নয় এই কথাটি সত্যি নয়ভালবেসেই জয় করা যায় মানুষের হৃদয়।
আবার,পাথরে ফুল,আর সাগরের ঢেউ ও থামিয়েছেন অনেকে।সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে,হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যিনি সারা জাহানের বাদশা হয়েও,উনার পথে কাটা দেয়া বুড়িমার মন জয় করেছিলেন শুধু ভাল ব্যবহার ও ভালবাসা দিয়ে।শুধু বুড়ি মার নয় তার সবচেয়ে বড় বড় শুত্রুকেও এই ভালবাসা আর সুন্দর ব্যাবহার দিয়ে জয় করেছিলেন।।সোজা কথায়,ভালবাসা হচ্ছে, ভালবাসার মানুষ,প্রানি, উদ্ভিদ, বস্তু যাই হোক তাকে ভাল রাখা বা ভাল রাখার আপ্রান চেষ্টা করা।
মিষ্টি নাম শুনলেই যেমন মনের মধ্যে খচ করে নাড়া দেয় টাংগাইলের চমচমের নাম।কিছুদিন পর মিষ্টি নাম শুনলেই সবার চোখে চোখে ভাসবে মিষ্টি আপুর অবদান।আমার অন্যতম প্রিয় শিল্পী নকুল কুমারের একটা গান দিয়ে শুরু করছি।
খালি কলসি বাজে বেশি ভরা কলসি বাজেনারুপ নাই যার সাজন বেশি রুপের মাইয়া সাজেনা
আসলেই মিষ্টি আপুকে নিয়ে কি লিখব বলেন?তার কলস যে ভরা তা আমরা সবাই জানি।দুই সপ্তাহ আগেই আমাদের একটা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আমরা একটিভ উদ্যোক্তাদের নিয়ে উদ্যোক্তা দিবস পালন করব।যাতে তারা আরও উৎসাহিত হোন।যিনি আমাদের জন্য এত কিছু করছেন তাকে রেখেই আমরা কিভাবে শুরু করি বলেন,অবশেষে আমাদের সহ প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত পরামর্শ মোতাবেক আপুকে নিয়ে আজকের এই দিবসের কার্যক্রম শুরু করা হলো।যদিও মিষ্টি আপুর আপত্তি ছিল,তিনি বলেছিলেন উদ্যোক্তাদের মাঝে থেকে কাউকে দিয়ে শুরু করতে কিন্তু আমরাই আপুকে দিয়ে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই।★মিষ্টি আপু উইতে জয়েন হয়েছেন ২০১৯ এর ১৩ ই সেপ্টেম্বর।
★একটিভ হন জানুয়ারি ২০২০ থেকে।★১০ম আড্ডা থেকে তিনি সব গুলো আড্ডায় নিয়মিত ছিলেন।★অন্যান্য সব গ্রুপ ছেড়ে শুধু উইতেই লেগে ছিলেন।★উনার উইতে পোস্ট সংখ্যা হাজারের উপরে।★হাইটেক পার্কের ৮০ ঘন্টার ই কমার্স ট্রেইনিং করেন।★টাংগাইল ড্রিস্টিক হেডের দায়িত্ব পান ০৫/০১/২০২১ তারিখে।★টাংগাইল মিটাপ হয় আপুর দায়িত্বে ২৩/০১/২০২১ তারিখে।সবার সহোযোগিতায় তা সফল হয়।★আপুর দায়িত্বে আরও ৬ জন সহ প্রতিনিধির দায়িত্ব পাই, জিয়া আপু,সুবর্ণা আপু,নাসরিন আপু,শিল্পি আপু।★২৪/০৫/২০২১ তারিখে আপুর ডাকে সুপার একটিভ উই উদ্যোক্তারা মিটাপে আসেন ৩৪ জন।যেখানে উই সফটওয়্যার, ই টিন,সাবস্ক্রাইবার,আইসিটি গ্রান্ট সহ নানা বিষয়ে সবাইকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন।★মিষ্টি আপুর সবাইকে যেমন বুঝানোর ক্ষমতা তেমনি অন্যকে বুঝার ক্ষমতাও চুড়ান্ত লেভেলের।।।★যারা সৎ এবং ক্লিয়ার কাট তাদের জন্য মিষ্টি আপু চমচমের মতই মিষ্টি।
★যাদের মনে কুটুলতা (ভেজাল) আছে তাদের কাছে মিষ্টি আপু(কাচা বা শুকনো লংকা)
মিষ্টি আপুর আসলেই গুনের শেষ নেই,আশা রাখি আপুর সাথে থেকে নিজের মধ্যেও এসব গুন ধারন করতে পারব।সবার নিরলস কাজ,সহযোগিতা ও দোয়াই পারে আমাদের টাংগাইল কে দেশের সেরা ই-কমার্স জেলায় পরিনত করতে।